*মহাকুম্ভ* ২০২৫
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২৪ জানুয়ারি:
“শুনেছি পূর্বজন্মে অনেক পূণ্যসঞ্চয় করতে পারলে ইহজন্মে অভৃতকুম্ভযোগেস্নানের সৌভাগ্যলাভ ঘটে এবং …”। কুম্ভসফরের ওপর নারায়ণ সান্যাল ‘পয়োমুখম্’ শুরু করেছিলেন এভাবেই। পরিকল্পনা না করতেই কীভাবে সস্ত্রীক রাজ-আদরে কুম্ভে সফর করলেন তিনি, সেই কাহিনী বর্ণনা করেছেন। সেটা ১৯৮৬ সালের কথা।
কুম্ভ যেতে ভাগ্য এবং সদিচ্ছা— দুটোই দরকার। অনেকেই গিয়েছেন, বা যাচ্ছেন প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে। আবার অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্বেও যাওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ ট্রেনগুলোয় ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রব। এই অবস্থায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক, জাতীয়তাবাদী সংগঠক সুমিত সুর শুক্রবার ফেসবুকে বড় হরফে আর্জি জানিয়েছেন, “মনটা মহাকুম্ভতে যেতে বড্ড টানছে….ফেব্রুয়ারি শেষে যেতে চাই। কেউ আমায় নেবেন সাথে?” পোস্ট করার তিন ঘন্টার মধ্যে ১৮টি উত্তর এসেছে।
অভিজিৎ দত্ত লিখেছেন, “আমরা যাচ্ছি ট্রেনে ২৫ ফেব্রুয়ারি, কিন্ত কোনো টিকিট কনফার্ম হয়নি। কষ্ট করে যেতে হবে, ১৩ ঘন্টা সময় লাগবে। আপাতত এই পরিস্থিতিতে আছি, এখন বাবা মহাদেব যানে কী হবে।” প্রিয়ঙ্কর রায় লিখেছেন, “আমারও যাওয়ার খুব ইচ্ছে। কিন্তু ৯০০ কিলোমিটার ১৬ ঘন্টা গাড়ি চালানোর সাহস পাচ্ছি না। আবার শুনছিলাম ওখানে কোন কোন দিনে জাতীয় সড়ক বন্ধ রাখছে। বুঝতে পারছি না।
‘বাঙালির প্রিয় ভ্রমণ’ ফেসবুক গ্রুপে একটি ঘোষণা করা হয়েছে। কলকাতা – এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ)- কলকাতা বাস টিকেট বুকিং পাওয়া যাচ্ছে *কলকাতা থেকে প্রয়াগরাজ
**দুর্গাপুর থেকে প্রয়াগরাজ
***সান্ত্রাগাছি থেকে প্রয়াগরাজ
****বর্ধমান থেকে প্রয়াগরাজ
*****বারাসত থেকে প্রয়াগরাজ
যোগাযোগের তিনটি নম্বর দেওয়া হয়েছে এতে। 𝐇𝐞𝐥𝐥𝐨 – 𝟗𝟏𝟓𝟑𝟕𝟎𝟒𝟕𝟎𝟒
𝐎𝐟𝐟𝐢𝐜𝐞 𝐂𝐨𝐧𝐭𝐚𝐜𝐭 – 𝟎𝟑𝟐𝟏𝟓 𝟑𝟓𝟗𝟎𝟓𝟖
𝐖𝐡𝐚𝐭𝐬𝐚𝐩𝐩 -098329 86231
তবে আপনারা মজা পাবেন বাঁকাদার মহাকুম্ভ অভিযানের কথা জেনে। ‘বাংলা ও বাংলার প্রকৃতি’ ফেসবুক গ্রুপে লেখা হয়েছে— “৭৮ বছরের বাঁকাদা ৭৩ বছরের স্ত্রীর সঙ্গে ভ্যানরিকশা করে চললেন মহাকুম্ভ। বাঁকাদা কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, পোশাকি নাম দুলাল বিশ্বাস, আমার পূর্বপরিচিত। সাইকেলে আমিও তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়েছি কয়েকবার। আমার বাড়িতেও গতবছর এসেছিলেন, সাইকেলে করে, কৃষ্ণনগর থেকে দত্তপুকুর। প্রতি রবিবার তিনি ও তাঁর প্রধান সঙ্গী ডা. সঞ্জয় রাহা সাইকেলে করে বেরিয়ে পড়েন, যাত্রাপথ কমপক্ষে ৪০ কিলোমিটার। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি বা শরীর খারাপ তাঁদের কখনও আটকাতে পারেনি। মাঝেমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছেন কয়েকবার। এরপূর্বে এই ভ্যানরিকশাকে অবলম্বন করে সস্ত্রীক পৌঁছে গেছেন জয়দেবের মেলা, গঙ্গাসাগর ও আসামের কামরূপ কামাখ্যা।
গত রবিবার, ১৯ জানুয়ারি নদিয়া জেলায় কৃষ্ণনগর থেকে পদচালিত ভ্যানরিকশায় যাত্রাশুরু করার (বেলা ১:৩০-এ) পরবর্তী রাত্রিবাস সমূহের তালিকা—
১৯ জানুয়ারি—
পূর্ব বর্ধমানের কুসুম গ্রামের ৪ কিমি
আগে একটি ফার্নিচারের দোকানে।
২০ জানুয়ারি—
বর্ধমানের থেকে ১৪ কিমি এগিয়ে
রাস্তা পার্শ্ববর্তী একটি ধাবায়।
২১ জানুয়ারি—
পানাগর থেকে ৩ কিলোমিটার এগিয়ে
বিরুদিয়াহ গ্রামে লালবাবা মন্দিরে।
২২ জানুয়ারি—
রানীগঞ্জে একটি গুরদোয়ারাতে।
২৩ জানুয়ারি—
স্বল্পভাষী প্রকৃতিপ্রেমিক বাঁকাদা অত্যন্ত সহজ-সরল মানুষ, আমাদের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। কিন্তু আমরা কি তাঁর সব কথা, সব শিক্ষা বুঝতে পারছি? আমার তা মনে হয় না। ভালো থাকুন বাঁকাদা।
এই পস্টের একদিনের মধ্যে শুক্রবার বেলা দেড়টায় ২ হাজার ৬০০-র ওপর লাইক, ১৮৯ প্রতিক্রিয়া এবং ১২৯টি শেয়ার হয়েছে।”