অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১২ ডিসেম্বর: প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি শৌচাগারের পাশে অতি সাধারণ ব্যবস্থাপনার এক ছোট্ট গবেষণাগার। সেখানে বসে জগদীশচন্দ্র বসু আবিষ্কার করলেন মহাজাগতিক তরঙ্গ ধরার যন্ত্র। ১৯২০-এর দশকে বসে প্রেসিডেন্সি কলেজের গ্রন্থাগারিক তৈরি করে ফেললেন ভারতের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্টার।
অজস্র নথিপত্র, দলিল, দাবিসনদ, চিঠি, গোপন রিপোর্ট, সরকারি নির্দেশনামা, পত্রিকা ইত্যাদি নিয়ে তৈরি হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল আর্কাইভ। সোমবার হল তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। অবিভক্ত বাংলার সারস্বত জগতের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে উঠল এই মহাফেজখানা।
কী কী আছে এখানে? প্রেসিডেন্সির ইংরেজি বিভাগের (স্নাতকোত্তর) ছাত্র সৌরভ চট্টোপাধ্যায় জানান, “দাঙ্গার হাত থেকে কলেজকে রক্ষা করতে প্রাণ দিচ্ছেন দারোয়ান রাম ইকবাল সিং। পাওয়া গিয়েছে দাঙ্গার সময়ে ছাত্রদের রক্ষা করার জন্য কলেজে রাত্রি কাটানো অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের লেখা স্মৃতিচারণ। আলেকজান্ডার পেডলারের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশের প্রথম আধুনিক গবেষনাগার। তাতে বসে প্রফুল্লচন্দ্র রায় কাজ করছেন। এ সবের নথি যেমন আছে, তেমনই অনেক পরে অমর্ত্য সেন থেকে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখালেখি। ডেভিড হেয়ার থেকে ডি এল রিচার্ডসন, হেনরি রসার জেমস, কিশোরীচাঁদ মিত্র, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, ভূপতিমোহন সেনদের স্মৃতিধন্য প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনীর স্মৃতি।
নকশাল পর্বে বাজেয়াপ্ত ও নিষিদ্ধ হওয়া প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকার হদিশ পাওয়া গিয়েছে এতদিন পরে। পরাধীন দেশে বিজ্ঞান চেতনা প্রসারের জন্য প্রেসিডেন্সির সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দর্শন সেমিনার সোসাইটির কার্যকলাপ সংক্রান্ত নানা দলিল উদ্ধার হয়েছে এবং সংরক্ষিত হয়েছে।
প্রয়াত অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তীর শুরু করা এই ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ করতে উদ্যোগী হয়েছেন প্রেসিডেন্সির সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক উপল চক্রবর্তী, সুকন্যা সর্বাধিকারী এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রেসিডেন্সির কৃতি প্রাক্তনী রোচনা মজুমদার।”
উপল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে তৈরি হওয়া এই ওয়েবসাইটে যে পরিমাণ তথ্য সংরক্ষিত হয়েছে, তা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস তো বটেই ভারতের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসলিখনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বিপুল তথ্যভাণ্ডার পাওয়া গিয়েছে জগদীশচন্দ্র বসুর গবেষণাপর্ব নিয়ে।