জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৬ মার্চ: রাস্তা তুমি কার। জঙ্গলের বুক চিরে লাল মোরামের রাস্তা। অনবরত বালি বোঝাই ভারি যান চলাচল। ভারী যান চলাচলে বেহাল হয়ে পড়ছে রাস্তা। আর সেই সুযোগে রাস্তা সারাইয়ের নামে অবাধে চলছে অবৈধ টোল আদায়। নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের এগারো মাইল এলাকায়। খবর পেয়ে বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত।
প্রসঙ্গত, কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েত সংলগ্ন অজয় নদ। আর অজয় নদের বালির বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেকারণে বনকাটি বিভিন্ন নদীঘাট এলাকায় অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের রমরমা কারবার চলছে। আর ওই ওভারলোডিং বালি বোঝাই লরি গ্রামের রাস্তা দিয়ে বেআইনীভাবে যাতায়াত করে। গ্রামের রাস্তা ছাড়াও কাঁকসার জঙ্গল মহলে অবাধে যাতায়াত করে বালি বোঝাই লরি, ডাম্পার। যার ফলে মোরাম রাস্তা ভেঙ্গে চৌচির। খানাখন্দে ভর্তি। সাধারণ মানুষের সুষ্ঠভাবে চলাচল করা যায় না।
বনদফতর রাস্তাটি মেরামত করলেও, বর্ষায় আরও বেহাল হয়ে পড়ে। ভারি লরি যাতায়াতে বনাঞ্চলের রাস্তায় বড় বড় জলাশয় তৈরী হয়। ভারি যান চলাচলে সবুজ অরণ্য নষ্ট হচ্ছে। তেমনই সবুজের মাঝে লালমাটির বুকচেরা রাস্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। আবার ভারি গাড়ি যাতায়াতের কম্পনে জঙ্গলে থাকা পশুপক্ষী ও অন্যান্য প্রাণী আতঙ্কে বিলুপ্তির পথে। আর বেহাল রাস্তা সারাইয়ের নামে অবাধে অবৈধভাবে টোল আদায় শুরু করছে একশ্রেণির মাফিয়া। রীতিমতো উন্নয়ন সমিতির নাম নিয়ে দুধরনের অবৈধ কুপন ছাপিয়ে দু’শো টাকা করে গাড়ি পিছু চলে টোল আদায়। পানাগড় মোরগ্রাম রাজ্যসড়কের ওপর এগারো মাইলে জঙ্গলমোড়। সেখান থেকে সোজা রাস্তা অযোধ্যা হাইস্কুলে উঠেছে। প্রায় ২ কিলোমিটার ওই রাস্তা বালি বোঝাই লরি ডাম্পার যাতায়াতের একমাত্র গ্রিন করিডর হিসাবে ব্যাবহার হয়। বেহাল রাস্তার ওপর মাঝে মধ্যে ছাই ফেলা হয়েছে। আর সেটাই রাস্তা সারাইয়ের নমুনা। রাস্তার কিছুটা গিয়ে অ্যাডবেসটরের ঘর তৈরী করে টোল আদায়ের অস্থায়ী অফিস। পাশেই মাফিয়াদের বিলাশবহুল মার্বেল বসানো ঘাঁটি। বেশিরভাগ সময় ওই বিলাশবহুল ঘর বন্ধ থাকে। অ্যাডবেস্টরের ঘর থেকে চলে অবৈধ টোল আদায়। ১০০ টাকার দু’রকমের কুপন। যার কোনো রেজিস্ট্রেশন কিম্বা সরকারি কোনো সিলমোহর নেই। দিনরাত কমপক্ষে ২০০-৩০০ লরি ডাম্পার যাতায়াত করে। হিসাব মতো প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা দৈনিক আদায় হচ্ছে। যার পুরোটাই চলে যায় মাফিয়াদের পকেটে। ফলে প্রতিমাসে রাজ্যের কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান হচ্ছে। গত কয়েকমাস ধরে অবাধে চলছে এই অবৈধ টোল আদায়।
স্থানীয় বনকাটি পঞ্চাায়েত প্রধান পিন্টু বাগদী জানান, “গোটা বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি।” পূর্ব বর্ধমান বনবিভাগের মুচিপাড়া রেঞ্জার তরুণ ব্যানার্জি জানান, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কাঁকসার বিডিও সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, “অভিযোগ হয়েছে। পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”