সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২২ ফেব্রুয়ারি: কড়া নিরাপত্তায় আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এবার বাঁকুড়া জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক ধাক্কায় ৪৩ শতাংশ কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষা মহল।
সিসি ক্যামেরায় নজরদারিতে রাজ্যের ৭ লাখ পরীক্ষার্থীর সাথে বাঁকুড়া জেলার ৩০ হাজার ছাত্র ছাত্রী তাদের জীবনের প্রথম বড়ো পরীক্ষায় বসছে। পরীক্ষা গ্ৰহণের জন্য জেলায় ১১৬টি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়েছে। এবার জেলার পরীক্ষার্থীর সংখ্য ৩০, ২১৩ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ১৪, ০৬০ জন ও ছাত্রী ১৬, ১৫৩ জন। বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের বড়জোড়া বেলিয়াতোড় রেঞ্জ এলাকার হাতি উপদ্রুত গ্রামগুলির যেসব পড়ুয়ারা জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে পরীক্ষা সেন্টারে যাবে তাদের জন্য বন দফতর গাড়ির ব্যবস্থা রেখেছে। কারণ এই এলাকায় এখন ৭৪টি হাতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের নিশ্চিন্তে বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা শেষে ফের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা আগেই ঘোষণা করেছেন বাঁকুড়ার ডিএফও উমর ইমাম।
তবে রাজ্যে ৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া জেলা বাঁকুড়ায় এক লাফে ৪৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলার শিক্ষা মহল। যেখানে গতবছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫৩, ১২২ জন এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০,২১৩ জন। অর্থাৎ ২২,৯০৯ জন পরীক্ষার্থী কমেছে। এবিষয়ে নানা মত দেখা দিয়েছে। ড্রপ আউট ও বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে টেক্কা এর মূল কারণ বলে আভিমতে প্রকাশ।
বাঁকুড়া জেলা এবিটিএ’র সম্পাদক অস্মিতা দাশগুপ্ত বলেন, পরীক্ষার্থী কম হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। রাজ্যে কর্ম সংস্থানের কোনো দিশা নেই। বাজার দর অগ্নি মূল্য। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে গৃহকর্তা। বাধ্য হয়ে স্কুল ছুটের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ছে।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পিযূষ কান্তি বেরা বলেন, স্কুল ছুট হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে না দেখে বলা যাবে না। পরীক্ষার্থী কেন কমল তা নিয়ে বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করেছি। ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছিল। সেবার
জেলাজুড়ে ৩০ শতাংশ পড়ুয়া কম ভর্তি হয়েছিল। তারাই এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বয়সসীমা বাড়ায় এবং টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম হয়েছে।
যদিও বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী কম হওয়ার কারণে আত্ম সমীক্ষার দরকার বলে মনে করেন শিক্ষকদের একাংশ। আবার একাংশের দাবি, নবম শ্রেণিতে উঠলেই সবুজশ্রী’র সাইকেল পাচ্ছে পড়ুয়ারা। তাই অনেকেই নবম শ্রেণির পর ড্রপ আউট হয়ে রোজগারের ধান্দায়, কেউ পরিযায়ী হয়ে ভিন রাজ্যে কাজে পাড়ি জমাচ্ছে, কেউ এলাকাতেই লরি বা ট্রাক্টরের খালাসির কাজে লেগে যাচ্ছে।
ফলাফলে নজরকাড়া জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার ব্যাপারটি হালকাভাবে নিলে চলবে না। স্কুল ছুটের সংখ্যা সত্যিই বাড়ছে কিনা, চাকরির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, পড়াশোনায় হতাশা বাড়াচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ। তবে বেসরকারি স্কুল যাওয়ার প্রবনতাও একটা কারণ বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু সরকারি স্কুল কেন বেসরকারি স্কুলের মত ভালো পড়াশোনার দায় নিতে পারছে না তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে।