পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৭ এপ্রিল: রাত হলেই রুট ছেড়ে বেরুট দিয়ে হিলিতে ঢুকছে পন্যবোঝাই লরি। উঠছে গাড়ি প্রতি টাকা তোলার অভিযোগও। অভিযোগ পেতেই সচেষ্ট পুলিশ নামলো অভিযানে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খোদ জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পতিরাম থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত অভিযান চালায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ। যে অভিযানে জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহঃ নাসিম, হিলি থানার আইসি গনেশ শর্মা, পতিরাম থানার ওসি বিরাজ সরকার সহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। যদিও রুটিন ভিজিট বলেই দাবি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে।
ভারত-বাংলাদেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত হিলি স্থলবন্দর। যে বন্দর দিয়েই প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টি মাল বোঝাই লরি ওপারে যায়। কিন্তু দীর্ঘ বেশ কিছুদিন ধরে করোনার লকডাউনে দু’দেশের অস্থিরতায় কমে আসে বাংলাদেশে লরি যাওয়ার সংখ্যা। এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পণ্য সামগ্রী বোঝাই লরি হিলিতে জমা হতে হতে তা যেন একটা মাত্রা অতিরিক্ত পর্যায়ে পৌছায়। দীর্ঘ প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে এমন লরির সারি থাকায় একদিকে যেমন সমস্যায় পড়ে ব্যবসায়ীরা। তেমনি সমস্যায় পড়তে হয় প্রশাসনকেও। দীর্ঘ রাস্তাজুড়ে এমন লরির সারিতে জেলায় বাড়তে থাকে পথ দুর্ঘটনাও। যা কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও জেলা
প্রশাসনকে একত্রিত ভাবে মাঠেও নামতে দেখা যায়। এদিকে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একাংশ পুলিশ কর্মী ও কিছু অসাধু কারবারীদের যৌথ তৎপরতায় দেদার অসাধু কারবার চালাবার অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে সরব হয়েছে বেশকিছু ব্যবসায়ীও। বুধবার এমনই এক ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমতো শোরগোল পড়েছে গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরে।
জানা গেছে, ওইদিন রাতে বেশকিছু মাল বোঝাই লরিকে পতিরাম থেকে বালুরঘাট হয়ে ঘুরপথে হিলি নিয়ে যায় কিছু অসাধু কারবারীরা। যার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ। পন্য বোঝাই লরিগুলির ক্ষেত্রে প্রধান রুট পতিরাম থেকে হিলি হলেও রাতের অন্ধকারে কিভাবে বেরুট দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকবার পরেও কিভাবে মোটা টাকার বিনিময়ে বেরুট দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই লরিগুলিকে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
যদিও একাংশ ব্যবসায়ীদের দাবি, রাতের অন্ধকারে কিছু অসাধু লোকজন দীর্ঘদিন ধরেই এসব কারবার করে চলেছে। আর তার জেরে ক্ষতি হচ্ছে তাদের ব্যবসা। প্রায় প্রতি রাতে অসাধু কারবারীদের এমন কারবারের খবর পেয়েই এদিন দুপুরে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে। পতিরাম থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খতিয়ে দেখেন মালবোঝাই লরিগুলির পরিস্থিতি। কিভাবে সুশৃঙ্খল ভাবে যাবে লরিগুলি তারও একটি নির্দেশিকা এদিন পতিরাম থানার ওসি’কে দিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সুত্রের খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে যাওয়া বিভিন্ন পণ্যের গাড়িকে চিহ্নিত করতে একাধিক রঙের লিফলেট বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পতিরাম থানার পুলিশকে। যেখানে গাড়ির নম্বর, চালকের মোবাইল নাম্বার, কি পণ্য রয়েছে তার ব্যাখ্যা রাখবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে লিফলেটগুলি পতিরামের নাকা চেকিং থেকে লরির গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হবে পুলিশ প্রশাসনের তরফে। আর যার মাধ্যমেই সুষ্ঠু ভাবে ব্যবসা চলবার ইঙ্গিত দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার বলেও সুত্রের খবর।
বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে’কে ফোন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, রুটিন মাফিক ভিজিটেই গিয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় লরিগুলি দাঁড়িয়ে থাকবার কারণে যাতে কোনো পথ দুর্ঘটনা না ঘটে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

