আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২২ নভেম্বর: মোদীর কারণেই লোকসভায় ফল খারাপ হয়েছে। অনুব্রতকে এমনটাই জানালেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। কেউ কেউ সিপিমের ভোট বিজেপিতে যাওয়ায় ফল খারাপ হয়েছে বলে জানান দলের জেলা সভাপতিকে। আবার অনুন্নয়নের জন্য ফল খারাপের কথাও উঠে আসে রামপুরহাট বিধানসভার কর্মী সম্মেলনে। সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মামার গ্রাম কুসুম্বা অঞ্চল সভাপতিকে সরানোর পাশাপাশি এক অঞ্চল সভাপতির ডানা ছেঁটে দেওয়া হয়। সতর্ক করা হয় রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যানকে।
শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে রামপুরহাট বিধানসভার কর্মী সম্মেলন করে তৃণমূল। সভায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা সহ সভাপতি রানা সিংহ, সৈয়দ সিরাজ জিম্মি সহ ১৫ টি অঞ্চলের সভাপতি, রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশ্বিনী তেওয়ারি।
সভায় শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি কুসুম্বা। ওই অঞ্চলের সভাপতি রামপ্রসাদ সাহাকে প্রশ্ন করেন কেন লোকসভায় ফল খারাপ হল? তিনি সঠিক উত্তর দিতে না পারায় ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনকে নির্দেশ দেন অঞ্চল সভাপতিকে সরিয়ে দাও। এরপরেই খরুন অঞ্চলের সভাপতি আশিস সাহাকে ডাকা হয়। তিনিও লোকসভায় পরাজয়ের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় ব্লক সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয় সেখানে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের। তবে আশিসবাবুকে রেখেই।
কাষ্ঠগড়া অঞ্চল সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলেন, “লোকসভায় মানুষের কাছে গেলে তারা বলেছেন এটা মোদীর ভোট। দিদির ভোট যখন হবে তখন তৃণমূলকে ভোট দেব। ফলে অধিকাংশ সিপিএম ভোট, এমনকি তৃণমূলের কিছু ভোট গিয়েছে বিজেপিতে। তাই ফল খারাপ হয়েছে”। যদিও লোকসভায় মোদীর প্রভাব বাড়ার বিষয়টি মানতে চাননি অনুব্রত। আয়াস অঞ্চলের বুথ সভাপতি মহাবীর পান্ডে লোকসভায় পিছিয়ে থাকার জন্য দলীয় কর্মীদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, “লোকসভায় বহু তৃণমূল কর্মী বিজেপির ভোট করেছে। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক রয়েছেন”।
মহম্মদ বাজার ব্লকের ভাঁড়কাটা অঞ্চলের সভাপতি খগেন রাজবংশী বলেন, “অনুন্নয়নের জন্যই দলের ফলাফল খারাপ হয়েছে। কারণ এলাকায় কোনও রাস্তা নেই। দু-একটি রাস্তা সামান্য হয়েই আটকে গিয়েছে। তাই মানুষ আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে”। অনুন্নয়নের প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হন অনুব্রত মণ্ডল। এনিয়ে কৃষিমন্ত্রী, ব্লক সভাপতি তাপস সিনহার সঙ্গে কথা বলেন। আশিসবাবুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কিছুটা বিরক্তিভাব প্রকাশ করেন অনুব্রত। যদিও আশিসবাবু বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনও তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়নি। উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে”। অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “কিছু রাস্তা হয়েছে। কিছু জায়গা ব্যক্তি মালিকানা হওয়ায় সেখানে রাস্তা গড়া সম্ভব হয়নি। জায়গার মালিকরা আপত্তি নেই লিখে দিলে রাস্তা গড়ে দেব”।
সব শেষে রামপুরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশ্বিনী তেওয়ারিকে ফলাফল খারাপের কারণ জানতে চান। উত্তরে সন্তুষ্ট না হওয়ায় সতর্ক করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আগামী দিনে চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিতে বলেন অনুব্রত। জেলা শাসকের ডাকা সভায় যাননি কেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অশ্বিনীবাবু বলেন, “ওই সভায় আপনি থাকবেন জানতাম না”। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেন, “অশ্বিনীর সঙ্গে একটু রসিকতা করছিলাম”।