আদিবাসী মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার ঘিরে ধুন্ধুমার কুমারগঞ্জে, গ্রামবাসীদের আটকের প্রতিবাদে সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ স্থানীয়দের

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৩ মে: বিএসএফ ক্যাম্প লাগোয়া নির্জন ঝোঁপ থেকে এক আদিবাসী মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড কুমারগঞ্জে। রাস্তা আটকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে রাত অবধি চলল স্থানীয়দের বিক্ষোভ। দোষীদের গ্রেপ্তার না করে নির্দোষদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে বাসিন্দাদের সাথে বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কুমারগঞ্জের দাউদপুর এলাকার এই ঘটনায় তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ওই মহিলার বাড়ি তপন ব্লকের বালাপুরে হলেও প্রায় একমাস ধরে কুমারগঞ্জের সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ফকিরগঞ্জ বরবাসাতে বাবার বাড়িতেই ছিলেন ওই আদিবাসী মহিলা। বুধবার দুপুরে হাটে যাবার কথা বলেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। তারপরে সারারাতেও আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে সামান্য দূরে দাউদপুর বিএসএফ ক্যাম্পের ঠিক পেছনে একটি নির্জন ঝোঁপের মধ্যে থেকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ওই মহিলার দেহ উদ্ধার করে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। যাকে ঘিরে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। মৃতের শরীরের বেশকিছু জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। যা থেকেই বাসিন্দাদের অনুমান ধর্ষণের পরেই খুন করা হয়েছে ওই আদিবাসী মহিলাকে। একই অভিযোগ তুলে টুইট করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারও।

পরিবারের লোকেদের অবশ্য দাবি, এই ঘটনা কোনোভাবেই আত্মহত্যা নয়। যা করলে নিজের বাড়িতেই করতে পারতো সে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারায় মামলা রুজু করেছে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। এদিকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মৃতার ভাই রবিন কিস্কুকে গ্রেপ্তার করতেই শুক্রবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সীমান্ত এলাকায়। নিজের সংসদ এলাকায় এমন ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার খবর পেয়ে তারাপীঠে দলীয় কার্যক্রম বাতিল করে সোজা কুমারগঞ্জে এসে পৌছান বালুরঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যার পরেই পরিস্থিতি আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে দাউদপুর শ্মশান এলাকায়। মৃতদেহ ফেলে রেখে রাত অবধি সুকান্তর নেতৃত্বে অবরোধ বিক্ষোভ চালান স্থানীয় বাসিন্দারা। বার বার পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ।

মৃতের দাদা কেষ্ট মার্ডি ও প্রতিবেশী সুজন হেমব্রম বলেন, আত্মহত্যার ঘটনা নয় এটা। যেটা করলে বাড়িতেই করতে পারতো। নির্জন জায়গায় যেভাবে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়েছে তাতে ধর্ষণের ঘটনার সন্দেহই বেড়েছে তাদের মধ্যে। পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার না করে নির্দোষ গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করছে। রাস্তা অবরোধ করে যে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, পুলিশ সঠিক তদন্ত করতে না পেরে নির্দোষদের গ্রেপ্তার করছে। যে ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ধর্ষণের পরেই ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বসাক অবশ্য জানিয়েছেন, ঘটনার পরেই যথেষ্ট পুলিশি তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিরোধীরা অহেতুক রাজনীতি করবার চেষ্টা করছে। তাদের পুলিশের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

মৃত আদিবাসী মহিলার সৎ ভাই রবিন কিস্কুই তার দিদিকে খুন করেছে এমনটাই দাবি করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে। এদিন সন্ধ্যায় একটি প্রেসমিটে রাহুল দে দাবি করেন, ধৃত এই হত্যার মূল পান্ডা। টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে তার দিদিকে খুন করেছে রবিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *