জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর: মঙ্গলবার সকালে অবরোধের মুখে পড়ল খড়গপুর আইআইটি। অবরোধকারীদের অভিযোগ, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের লকডাউন নীতি না মেনে নিজের মত করে লকডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। আর তার মাশুল দিতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত দোকানদার, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি সহ অন্যান্য অনেক মানুষকে। এমনই অভিযোগ তুলে আইআইটি ক্যাম্পাসে ঢোকার প্রধান এবং বর্তমানে একমাত্র ফটকের সামনে ‘গেট জ্যাম’ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যার সমর্থনে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ২ ঘন্টা ধরে চলা অবরোধের ফলে ক্যাম্পাসে ঢোকার কিংবা বেরনোর পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
অবরোধকারী ক্যাম্পাসের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ‘আনলক ইন্ডিয়া পর্বেও আইআইটি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে প্রবেশের চারটি ফটকের তিনটি ফটকই বন্ধ রেখেছেন, এর ফলে বিভিন্ন স্তরে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ক্যাম্পাসের দক্ষিণ (প্রেমবাজার ইত্যাদি)দিকের অবস্থানকারীদের ৩ কিলোমিটারেরও বেশি ঘুর পথে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হচ্ছে।
সিপিআই নেতা আয়ুব আলি জানিয়েছেন, ”ক্যাম্পাসের দক্ষিণ অংশে বসবাস করেন যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা বা দোকানদারেরা তাঁদের দোকান যেতে প্রতিদিনই ৬কিলোমিটার রাস্তা বাড়তি ঘুরতে হচ্ছে। যে বৃদ্ধের পেনশন তোলার প্রয়োজন বা যাঁদের আ্যকাউনট ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে তাঁদের কী যন্ত্রনা দায়ক পরিস্থিতি চলছে তা তাঁরাই জানেন।”
শহরের তৃণমূল নেতা জহরলাল পাল জানিয়েছেন, ”তুঘলকি কারবার চালাচ্ছেন আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট ঘোষণা আছে যে কেন্দ্রের নিয়মের বাইরে গিয়ে আলাদা করে লকডাউন ঘোষণা করা যাবে না, সেখানে কী করে কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত দোকানদাদের বেলা ২টার পর দোকান বন্ধ করে দিতে বলছেন? একজন দোকানদার কী এক বেলা দোকান করার জন্য বসে থাকবেন?”
উল্লেখ্য করোনা পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে এবং ক্যাম্পাসের মধ্যে ব্যবসাদারদের জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ক্যাম্পাসের চারটি গেটের তিনটি গেট বন্ধ করে দিয়ে মাত্র একটি গেট খোলা রেখেছে। কর্তৃপক্ষ নিয়ম করেছে যে বেলা ২টোর পর ক্যাম্পাসের ভেতরে দোকান খোলা রাখা যাবে না।
খড়গপুর শহরের সিপিএম নেতা পূর্ণেন্দু পানিগ্রাহী বলেন, ”আনলক পর্বে দোকান খোলার জন্য একজন সামান্য চায়ের দোকানদারের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরা ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা আবাসিকদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকেন কিন্তু, আইআইটি কর্তৃপক্ষ মনে করেন যে তাঁরাই দয়া করছেন দোকানদারদের। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এই দোকানদারদের শুধু ক্যাম্পাসের আবাসিকদের ওপর নির্ভর করে ব্যবসায় লাভ হয় না। ক্যাম্পাসের বাইরের এক বিরাট অংশের ক্রেতা রয়েছেন যাঁদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে দোকানদারদের ভাতে মারছে কর্তৃপক্ষ। একে সীমিত ক্রেতা তাও এক বেলার দোকান। কার্যত দোকানদাররা এই লকডাউন ও করোনার বাজারের প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে দোকান বন্ধ রাখলেই বেঁচে যান কিন্তু ক্ষতি স্বীকার করেও তাঁরা দোকান খুলছেন কারণ আবাসিকরা এঁদের ওপর নির্ভরশীল। আর কর্তৃপক্ষ সেই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন। আমরা দাবি করছি ওই দোকাদারের লাইসেন্স ফিরিয়ে দিতে হবে। যাঁরা একবেলা দোকান করছেন তাঁদের ভাড়া অর্ধেক নিতে হবে। যাঁরা দোকান করতে পারেননি তাঁদের ভাড়া মকুব করতে হবে এবং ক্যাম্পাসের সমস্ত প্রবেশ পথ খুলে দিতে হবে। ”
বিষয়টি নিয়ে আইআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্টার ভৃগুনাথ সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটস্যাপেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আইআইটির এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ”কেন্দ্রের যাবতীয় নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। আইআইটি প্রতিটি পদক্ষেপের ক্ষেত্রেই মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সাম্প্রতিক কালে বাড়তি সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে কিছু নতুন অবস্থান নিতে হয়েছিল কিন্তু সেটাও যথাযথ ভাবে উপযুক্ত জায়গাকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যা করছে তা ক্যাম্পাসের নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েই করছে।”
অন্যদিকে অবরোধকারীরা জানিয়েছেন, আগামী ৫ অক্টোবর গণ কনভেনশনের মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবেন তাঁরা।