পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: জীবিত রোগীকে মৃত বলে ঘোষণ। জলে ডুবে যাওয়া এক কিশোরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করেছিল পরিবারের লোকেরা। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে তার মাথায় ডেথ স্টিকার চিটিয়ে দিয়েছিল। পরিবারের লোকজনের দাবি, “ভালো করে না দেখেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা মুখে চাপ দিয়ে হাওয়া দিতে সে জল বমি করা শুরু করে। এবং শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া শুরু হয়েছিল। তারপরে আমাদের দাবি মতো অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টাও হয়৷ পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরের। অবিলম্বে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে”। আর এই ঘটনাকে ঘিরে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল রবিবার রাতে মেদিনীপুর হাসপাতালে। পরিস্থিতি সমালোতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়।
হাসপাতাল সুপারের দাবি, “এই ধরনের ঘটনাতে মৃতের পেশি সংকোচনের ফলে অনেক সময় মুখ থেকে তরল পদার্থ বের হয়৷ তা দেখেই হয়তো পরিজনেরা ভেবেছিল রোগী বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রোগী মৃত অবস্থাতেই এসেছিল।” ঘটনার পরে মেদিনীপুর হাসপাতালে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামানো হয়।
জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খড়্গপুর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক কিশোর ভি সাই (১৮), মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন কংসাবতী নদীতে স্নান করতে গিয়েছিল। সেখানে স্নান করতে গিয়ে সে জলে তলিয়ে যায়। কোনভাবে স্থানীয়রা তাকে চেষ্টা করে উদ্ধার করে। পরে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে এমার্জেন্সিতে থাকা চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তার কপালে ডেথ স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবারের লোকজনের দাবি, ”তাকে ভালো করে পরীক্ষা না করেই এই মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়। সন্দেহ হওয়াতে আমরা মুখে ফু দিয়ে চাপ দিতেই সে জল বমি করা শুরু করে। তারপরেই শ্বাস প্রশ্বাস চালু হয়ে যায়। আমরা ডাক্তারকে বারবার অনুরোধ করি দেখার জন্য। কিন্তু কেউই গুরুত্ব দেয়নি। অনেক চেষ্টা করে পুলিশ ও অন্যান্যদের বলার পর তাকে অক্সিজেন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।”
এই ঘটনাতে এমার্জেন্সিতে থাকা চিকিৎসকদের গাফিলতিতে পরে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে এমন দাবি করে উত্তেজনার তৈরি হয়। খড়্গপুর থেকে আসা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে। জুনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে এই কাণ্ড পুরোটা হয়েছে বলে দাবি। বারবার বলার পরেও কোনো সিনিয়র ডাক্তারকে আসতে দেখা যায়নি বলে দাবি পরিবারের। সিনিয়র ডাক্তারদের অনুপস্থিতি এবং সম্পূর্ণ গাফিলতিতে এই কিশোর মারা গেছে বলে অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু হয়।
মৃতের আত্মীয় রাজু বলেন, “এতক্ষণ হাসপাতাল চত্বরে কোন ডাক্তারকেই দেখা যাচ্ছিল না, যেই বিক্ষোভ শুরু হল প্রচুর পুলিশ হাজির হয়ে গেল। এতগুলো পুলিশ আসতে পারে একটা সিনিয়র ডাক্তার উপস্থিত হতে পারল না? পুরোপুরি ব্যর্থ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা পরিষেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এখানে সিনিয়র ডাক্তাররা কেউই থাকে না। অবিলম্বে এমার্জেন্সিতে থাকা যে ডাক্তারেরা এই যুবককে ঘোষণা বলে করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা এই দেহ ময়নাতদন্ত করতে দেবো না বা দেহ নিয়ে যাব না।”
একই দাবি করেছেন খড়্গপুর থেকে আগত খড়্গপুরের ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফিদা হোসেনেরও৷ তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ গাফিলতিতে হয়েছে এই ঘটনা৷ আমি জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ করছি৷ চরম গাফলতিতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে ৷” ঘটনায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও আধিকারিকদের ছুটে আসতে হয়। টানা কয়েক ঘণ্টা সন্ধে ৬টা থেকে উত্তেজনা পর্ব চলে। দীর্ঘ চেষ্টার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয় পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার ডাক্তার জয়ন্ত রাউৎকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ”এই ধরনের ঘটনায় মৃতের পেশি সংকোচনের ফলে অনেক সময় মুখ থেকে তরল পদার্থ বের হয়। সেটা দেখেই হয়তো পরিজনেরা ভেবেছিলেন রোগী বেঁচে রয়েছে। আদপে সেটা হয়নি। ওই কিশোরকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল।” এই ঘটনায় উত্তেজনা চরম থাকায় পরিবারের লোকজনের দাবি মতো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আধিকারিকরা। তবে অন্যান্য বারের মত এবারও সিনিয়ার চিকিৎসকদের মেদিনীপুর হাসপাতালে অনুপস্থিতি নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠলো।