রাজেন রায়, কলকাতা, ১৩ জুন: বছরখানেক আগে থেকেই তানিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন নজরে এসেছিল অর্থমন্ত্রকের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই তথ্য জানানোর পর শুরু হয় নজরদারি। পরে লস্কর-ই-তৈবার লিঙ্কম্যান সন্দেহে ১৮ মার্চ কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্কফোর্সের গোয়েন্দারা বাদুড়িয়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল বাদুরিয়ার তরুণী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তানিয়া পারভিনকে। প্রায় মাসতিনেক পরে তানিয়া পারভিনকে নিজেদের হেফাজতে নিল এনআইএ।
শুক্রবার সকালে এনআইএর তরফে বসিরহাট আদালতে তানিয়া পারভিনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আবেদন জানায় এনআইএ। বিকেলে বসিরহাট আদালতে আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর দমদম সেন্ট্রাল জেলে আদালতের নির্দেশিকা নিয়ে পৌঁছন এনআইএর আধিকারিকরা। এরপর বিচারাধীন বন্দি তানিয়া পারভিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় নিউটাউনে এনআইএর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতরে।
গোয়েন্দাদের দাবি, প্রায় ২ বছর ধরে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার লিঙ্কম্যান হিসেবে তানিয়া কাজ করত। বসিরহাটের বাদুড়িয়ার বাড়িতে বসে এলাকার মুসলিম যুবক যুবতীদের জঙ্গি কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করত সে। এই কাজের জন্য বেশ কয়েকবার কাশ্মীর, মুম্বই এমনকি দিল্লিতেও গেছে এই তরুণী। এই সমস্ত তথ্য পেয়েই বাদুড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তাঁর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে পাকিস্তান-সহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সেই কারণেই এ রাজ্যে এই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের জাল কতটা বিস্তৃত হয়েছে, তা জানতেই তানিয়া পারভিনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করে এনআইএ।
এনআইএ দাবি, ওই তরুণী প্রচন্ড বুদ্ধিমতী। ‘ডার্ক ওয়েব’-এর মাধ্যমে সে দেশের বিভিন্ন তথ্য লস্কর–ই–তৈবাকে ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছে। বাবা দিনমজুর। শান্ত স্বভাবের মেয়ে বলে পরিচিত ছিল। কলকাতার একটি কলেজে আরবি ভাষায় স্নাতকোত্তরের ছাত্রী ছিল। হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল তানিয়া। বাদুড়িয়ার ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াত। সেই মেয়েরই দুটি মোবাইলে মাসের খরচ কিনা কমবেশি ৭ হাজার টাকা! বিষয়টি নজরে পড়ে গোয়েন্দাদের। মেধাবী এই সাধারণ ছাত্রী জঙ্গিদের খপ্পরে কী করে পড়ল, সেই যোগসূত্রও খুঁজে বার করতে চান এনআইএ গোয়েন্দারা।