কুমারেশ রায়, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১২ নভেম্বর :
তান্ত্রিকের হাত ধরে পুজো শুরু ডাকাত কালীর, পোশাকি নাম মুক্তকেশী কালী। তবে ক্ষীরপাই ঘুঘুডাঙা কালীর আসল নাম কিন্তু ডাকাতে কালী, নামটা শুনলে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। এখন হয়তো ওই কালীমন্দিরে এমন কিছু হয় না যার ফলে ভয় লাগতে পারে। কিন্তু ওই এলাকার পাশাপাশি গ্রামের মানুষেরা তাদের বাপ ঠাকুরদার মুখ থেকে শোনা কথাগুলি সহজে ভুলতে পারেন না। তাই কোনও প্রবীণ ব্যক্তির কাছেই কালীর নাম বললে তারা প্রথমেই কালীর উদ্দেশ্যে দুহাত তুলে প্রণাম করেন।
ওই এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম থেকেই ওই কালীর নাম ডাকাত কালী ছিল না। প্রায় ৫০০বছর আগে ক্ষীরপাই শহর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে নিশ্চিন্দিপুর জমিদারের জায়গা জঙ্গলে ভর্তি ছিল। রাস্তা তো দূরের কথা, ওই জঙ্গল দিয়ে হেঁটে যাওয়া খুব মুশকিল ছিল। সেই সময়ে এক তান্ত্রিক লোকালয় থেকে দূরে নিষ্ঠা ভরে পুজো করার জন্য ওই গভীর জঙ্গলে আসেন। সেখানে একটি কুঁড়েঘরে একটি কালী মূর্তি তৈরি করে নিয়মিত পূজা করতেন। ওই তান্ত্রিক এর মৃত্যুর পর একই ভাবে ওই জঙ্গলে তাঁর শিষ্য থাকতে শুরু করেন। এইভাবে কয়েক দশক হওয়ার পর ওই জঙ্গল মানুষজন চলাচলের যোগ্য হয়ে ওঠে।
সেই সময় ক্ষীরপাই এর পার্শ্ববর্তী এলাকার দারুণভাবে মহামারী দেখা দেয়। ওই মহামারী থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে এলাকার মানুষ ঘুঘুডাঙার মন্দিরে তান্ত্রিক এর শরনাপন্ন হন। তিনি কালী মায়ের প্রসাদ দিয়ে মহামারী হাত থেকে রক্ষা করেন। এই ঘটনাটি তৎকালীন চন্দ্রকোনা রাজা চন্দ্রকেতুর কানে যায়। একদিন তিনি মন্দিরে গিয়ে তান্ত্রিককে বলেন তিনি পূজোর সমস্ত খরচ দেবেন। তান্ত্রিক কুল শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই রাজাই পূজোর দেখভাল করতেন।
ওই মন্দিরের বর্তমান সেবাইত শিবরাম চক্রবর্তী বলেন, বছরে একবার রাজা পুজো করতেন, বাকি সময় জঙ্গলে কেউ প্রবেশ করতেন না। তারপর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ওই মন্দিরের দায়িত্বে মাধব চক্রবর্তী এবং তারপর তাঁর জামাতা পাঁচ কড়ি চক্রবর্তী তথা শিবরামের দাদুর তত্ত্বাবধানে আসে। যেহেতু ওই জঙ্গলে কালী প্রতিমা আছে তাই বছরের বাকি সময় ডাকাতরা জঙ্গলের মধ্যে নিয়মিত পুজো করতো। সে জন্যই ওই কালীর নাম ডাকাত কালী। প্রতি ১২ বছর অন্তর কালী মায়ের মূর্তি তৈরী করা হয়। মায়ের ঘটে জল থাকে না, কারন তথা মদ দিয়ে ভর্তি করা হয়। জাগ্রত এই ডাকাত কালী মা কে মন প্রাণ দিয়ে ডাকলে মনের বাসনা পূর্ন হয়।