সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগনা, ৫ জানুয়ারি: ভেড়ির বাদশা। নয়ের দশকে বাংলাদেশ থেকে নদীপথে অবৈধভাবে ভারতে এসেছিলেন শেখ শাহজাহান ও তার পরিবার। সন্দেশখালির লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত সবই তখন বামেদের দখলে। শাসক দলের নেতা মোসলেম শেখের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়েছিল শেখ শাহজাহানের। কংগ্রেস সমর্থকদের থেকে মাছের ভেরি ও জমি দখল করা, কারণে অকারণে গ্রামবাসীদের থেকে জরিমানা আদায় করার দায়িত্ব তার উপরে দিয়েছিলেন মোসলেম। সেই দায়িত্ব একনিষ্ঠভাবে পালন করে সিপিআইএমের উচ্চ নেতৃত্বের মন জয় করেছিলেন শেখ শাহজাহান। তার পর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০০৯ সালে বসিরহাট লোকসভা বামেদের হাতছাড়া হয়। সিপিআই প্রার্থী অজয় চক্রবর্তী, তৃণমূল সাংসদ হাজি শেখ নুরুল ইসলামের কাছে ৮৫ হাজারেরও ভোটে হেরে যান। এরপর ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সন্দেশখালিতে তখনও সিপিআইএমের শেখ শাজাহানই বেতাজ বাদশা। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি জুড়ে বুথ দখল, রিগিং, খুন জখমের জন্য শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পরে মামলায় জর্জরিত হয়ে শেখ শাহজাহানের অনুগামীরা তাঁকে ছাড়তে থাকে। ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে শেখ শাহজাহান ২০১৬ সালের শেষের দিকে তৃণমূলে যোগ দেন, তৎকালীন অবিভক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরেই।

পুলিশের খাতায় শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম মায়ানমার থেকে সমুদ্রপথে সুন্দরবন হয়ে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার। শুধু তাই নয়, তাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড সহ সমস্ত নথি বানিয়ে দেওয়ারও কারিগর নাকি শেখ শাহজাহান। এছাড়া কাঠ ও গরু পাচারের অসংখ্য অভিযোগ তো রয়েইছে। সিপিএমে থাকাকালীন এইসব অভিযোগ তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা করতেন। তৃণমূলে যোগদান করার পরে অবশ্য এই অভিযোগ এখন সিপিএম, বিজেপির নেতারা করেন। তবে এ নিয়ে বিশেষ কিছু এসে যায়নি তাঁর।
১০০ শতাংশ ভোটে জিতে জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী বিকাশ উন্নয়ন দফতরের কর্মধ্যক্ষ হন। সুদূর সুন্দরবনের এদো পাড়ার পার্টি অফিস ছেড়ে জেলা সদর বারাসতের জেলা পরিষদের দোতলার ঝাঁ চকচকে অফিস ঘরে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। রবিন হুডের পরিচিতি করতে সন্দেশখালি বাজারে তৈরি করেন তার নিজের নামে শেখ শাজাহান মার্কেটেও। সরকার বদলায়, কিন্তু শেখ শাহজাহানের সাম্রাজ্য যে অবিকৃতই থাকে শুক্রবার সাত সকালে সন্দেশখালি সরবেড়িয়াতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেলেন ইডির দুঁদে আধিকারিকরা। শেখ শাহজাহানের উত্থান হয়েছিল উল্কার গতিতেই। সন্দেশখালি, সরবেড়িয়ার মানুষ বলেন, শাহজাহানের হাতেখড়ি হয়েছে বাম জমানাতেই। সেই প্রতিপত্তি আড়ে বহরে বেড়েছে জোড়াফুল জমানায়।

