TMC, Birbhum, বীরভূমে তৃণমূলের জেলা কমিটিতে কেষ্টর আধিপত্য

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, সিউড়ি, ১৯ অক্টোবর: অনুব্রতর হাতে গড়া জেলা কমিটিতেই শিলমোহর দিল রাজ্য কমিটি। ফের বীরভূমে ব্লক ও শহর কমিটির তালিকায়ও তারই অনুগামীদের নাম জ্বলজ্বল করছে। রবিবার জেলা কমিটির তালিকা দেখে খুশি অনুব্রত মণ্ডল। তবে বিধানসভা নির্বাচন হোক, কিংবা লোকসভা নির্বাচন, বীরভূম জেলায় শহরাঞ্চলে লিড না পাওয়ায় শহরাঞ্চলে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে।

যদিও, তৃণমূলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আজ কলকাতা থেকে দলের পক্ষ থেকে যে তালিকা পাঠিয়েছে, খুব সুন্দর তালিকা করেছে। এটা দলের পক্ষে ভালো হবে৷ যা ছিল তাই রেখেছে। সবাই তৃণমূলের হয়েই কাজ করবে৷ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “কালী পুজো, ছট পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো যাক তারপর সবাইকে নিয়ে বৈঠক করবো। নতুন মুখ কই, যা ছিল তাই আছে। যুবতে পরিবর্তন হয়েছে কিছু, বয়স হলে তো হবেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, তাঁরা যা করবেন তাই হবে।”

প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের আগেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ফল খারাপ হলে পদ খোয়াতে হবে। যদিও, পরবর্তীতে তা খুব একটা কার্যকরী হয়নি৷

অন্যদিকে, ২০২১ সালে অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার ১১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১০টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তবে বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, দুবরাজপুর শহরে লিড পেয়েছিল বিজেপি৷ একই ভাবে অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে কোর কমিটির নেতৃত্বে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমের দুটি লোকসভাতেই জয়ী তৃণমূল-কংগ্রেসের প্রার্থীরা৷ কিন্তু, এক্ষেত্রেও জেলার ৪ শহরে লিড পেয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি৷

এদিন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বীরভূম জেলার ব্লক ও শহর কমিটির পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশিত হয়৷ উল্লেখযোগ্য ভাবে তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্লক স্তরের তুলনায় শহরাঞ্চলের বেশকিছু পদে রদ বদল করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়েছে৷ যেমন, রামপুরহাট শহর সভাপতির পদ থেকে সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে সরিয়ে সভাপতি করা হল সাংসদ শতাব্দী রায় ঘনিষ্ঠ অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায়কে৷ এছাড়াও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রিয়নাথ সাউ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অনিন্দ্য কুমার সাহাকে সহ সভাপতি করা হয়েছে৷

সিউড়ি শহর সহ-সভাপতি পদে পুরনো তৃণমূল নেতা রমারঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আসা হলো। পাশাপাশি বোলপুর শহর সভাপতি পদে ছিলেন কাউন্সিলর সুকান্ত হাজরা। তাঁকে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছে সুব্রত হাজরা ওরফে ডালিমকে। বোলপুর শহর যুব সভাপতি পদে নতুন মুখ সৌরভ চক্রবর্তী।

দুবরাজপুরে দলের দুই সদস্যের ব্লক আহ্বায়কের জায়গায় ৫ সদস্যের আহ্বায়ক করা হয়েছে। দুবরাজপুর শহরে নতুন করে শেখ আনোয়রকে যুব সহ সভাপতি করে আনা হয়েছে। পাশাপাশি মহিলা সভানেত্রী করা হয়েছে নতুন মুখ রীনি দত্ত’কে। এছাড়াও, একাধিক যুব সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে রদ বদল করা হয়েছে। সাঁইথিয়া শহর যুব সভাপতি করা হল সুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে। যদিও ব্লক সভাপতি পদে কোনো বদল হয়নি৷ পুরনো সভাপতিদের উপরই আস্থা রেখেছে দল৷ ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকে সভাপতি পদে ছিলেন প্রমোদ রায়। ওই ব্লকে ‘সভাপতি’ পদটিই সরিয়ে দিয়ে ২ জনের কমিটি করে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। প্রমোদ রায়কে রেখেই নতুন মুখ শামসুল আলম মল্লিককে নিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ব্লক সভাপতি মনোনীত হয়েছিলেন প্রমোদ রায়। তার আগে তিনি ১০ বছর সংশ্লিষ্ট কলেশ্বর অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। সামসুল আলম মল্লিক সংশ্লিষ্ট উলকুণ্ডা পঞ্চায়েতের তিনবারের প্রধান ছিলেন। প্রথম থেকে অঞ্চল সভাপতির পাশাপাশি বর্তমানে ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ্যের দায়িত্বে রয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর , দুজনেই অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে সামসুলকে ওই দায়িত্বে আনা হয়েছে। দু’জনেই অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করার চেষ্টা করবেন।
তবে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি নিয়ে নজর ছিল সবার। ওই ব্লকে তৃণমূল ভারসাম্যের রাজনীতি করেছে। কারণ জেলার সিংহভাগ ব্লকে অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের বসানো হয়েছে। নতুন পদে আসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কেষ্টকে। তবে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে এই মুহূর্তে পাল্লা ভারী কাজল শেখের। এরই মধ্যে ইস্তফা দেওয়ার পরেও ব্লক সভাপতির পদে রাখা হল নুরুল ইসলামকে। ব্লকের কোনও দায়িত্বেই রাখা হলো না অনুব্রত ঘনিষ্ঠ অশ্বিনী মণ্ডলকে। তা নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হতেই তার বিরুদ্ধে বোলপুর থেকে কলকাঠি নাড়া হয়েছিল বলে খোঁচা নুরুলের। নুরুল বলছেন, “শেষ সাত থেকে আট মাস ধরে একটা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। এটা বোলপুর থেকে যে করানো হয়েছে এ কথা আমি অনেকবার বলেছি। লোভ ও ভয় দুটোই দেখানো হয়েছে।” দলের এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক মহলের মতে ভারসাম্যের রাজনীতি বলে অবহিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে তালিকায় বীরভূম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদে জায়গা পেয়েছেন সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, জেলা সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মঈনুদ্দিন হোসেন ও বোলপুরের কাউন্সিল সুকান্ত হাজরা, জেলা সম্পাদক পদে কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষকে সরিয়ে রামপুরহাট থেকে সুশান্ত মুখোপাধ্যায়কে সম্পাদক করা হলো৷ বীরভূম জেলা যুব সহ-সভাপতি হলেন ওয়াসিম আলি ওরফে ভিক্টর, যুব সাধারণ সম্পাদক হলেন প্রিয়ম ভাণ্ডারী ও জেলা যুব সম্পাদক হলেন এমদাদুল হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *