পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ আগস্ট: বালি উঠা বা জাওয়া তোলা, এটা দিয়েই শুরু হলো বৃহত্তর ছোটনাগপুরের আদিম অধিবাসী কুড়মি তথা অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কৃষি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব করম পরব। পাত্রে বালি ভরে তাতে নির্দিষ্ট নেগ নেগাচার মেনে বিভিন্ন শষ্যবীজ বপন করা হয়। বপনের পূর্বে বীজগুলোতে হলুদ মাখিয়ে দেওয়ার রীতি রয়েছে, যা বীজের প্রতিষোধক হিসেবে কাজ করে। করম পরব মূলত কৃষি কেন্দ্রিক উৎসব।
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে, ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে ‘করম পূজা’ অনুষ্ঠিত হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয় উৎসবের তিনদিন, পাঁচদিন, সাতদিন অথবা ন’দিন আগের থেকেই। তারই শুভারম্ভ হলো এই বালি তোলা বা জাওয়া পাতার মধ্য দিয়ে। এরপর সাতদিন ধরে চলবে এর পরিচর্যা। এখান থেকে নিয়ে গিয়ে এগুলিকে লায়া বা মাহাত ঘরে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং প্রত্যেক দিন নিয়ম করে এগুলিকে বের করে হলুদ জল দেওয়া হয় এবং গান ও নাচ করে করে জাওয়ার চারপাশে ঘোরা(প্রদক্ষিণ) হয়। শেষদিন করম পরবের মূল অনুষ্ঠান।
কেবলমাত্র কুড়মী, মাহাত জনজাতিই করম পরব উদযাপন করেন না, অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ও এই উৎসব পালন করে। শিক্ষক বিপ্লব মাহাত বলেন, কৃষিকাজের প্রয়োজনে শষ্যবীজ সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান অর্জন, সেই সঙ্গে অঙ্কুরোদ্গম প্রক্রিয়াকে স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ এবং পরিচর্যার শিক্ষা গ্রহণ করা এই পরবের অন্যতম উদ্দেশ্য। করম পরবের রীতি রেওয়াজ, প্রাগৈতিহাসিক যুগে কৃষি আবিষ্কারের পর থেকেই অনুসরণ হয়ে আসছে বলেই কুড়মি সম্প্রদায়রা মনে করেন। “করম পরব” শুধুমাত্র একটি পরব নয়, এই উৎসবের আঙ্গিকে পূর্বপুরুষেরা কুমারী কন্যাদের আগামী জীবনযাপনের পদ্ধতির প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান প্রাপ্তির উপায় স্থাপনা করে গেছেন বলে কর্মী সম্প্রদায়ের মানুষেরা মনে করেন। ছোটনাগপুর মালভূমির বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা সহ পশ্চিমবঙ্গের মূলত জঙ্গল মহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলায় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে এই উৎসব পালন করা হয়।