আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ২৯ জানুয়ারি: বালুরঘাটে তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতিতে রেহাই পেল না মমতার স্বপ্নের কন্যাশ্রী প্রকল্পও। লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এক শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের বিডিওর। সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কড়া নির্দেশ জেলা শাসকের। দল থেকে বিতাড়িত হতে পারেন অভিযুক্ত শুভেন্দু মাহাত। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক নিখিল নির্মলের নির্দেশে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিডিও অনুজ শিকদার। বালুরঘাটের চিঙ্গিশপুর হাইস্কুলের এমন ঘটনায় আলোড়ন দক্ষিণ দিনাজপুরে। অভিযোগ, শুধু ভুয়ো নামে কন্যাশ্রীর টাকা আত্মসাৎ করাই নয়, বিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী না থাকলেও মিথ্যে তালিকা করেও টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, কন্যশ্রীর কে-টু প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী আঠেরো বছর বয়স হলেই ছাত্রীদের তাঁদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা করে চলে যায় সরকারি তরফে। চিঙ্গিশপুর হাইস্কুলে প্রায় ৬০০ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও বহু ভুয়ো নাম দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি বালুরঘাট শহরের একাধিক বাসিন্দাকেও ওই স্কুলের ছাত্রী বানিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক শুভেন্দু মাহাত বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে সত্যতা সামনে আসতেই অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিডিও।
জেলা শাসক নিখল নির্মল জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করে বিডিও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে যাবতীয় কাগজপত্র দাখিল করবার পাশাপাশি এব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ডিআইকে দিয়েছেন তিনি।
বালুরঘাটের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা শুভেন্দু মাহাত গত কুড়ি বছর ধরে চিঙ্গিশপুর হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ পদে কর্মরত রয়েছেন। তৃণমূলের নেতা হবার পাশাপাশি একই সাথে রোগী কল্যাণ সমিতি ও কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য পদেও রয়েছেন তিনি। অক্টোবর মাসে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে মানবেশ লাহা যোগদান করলেও তাঁকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি শুভেন্দু মাহাত বলে অভিযোগ। একই সাথে বিদ্যালয়ে কন্যাশ্রীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ডিআইএর কাছে নালিশ জানান বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, ওঠে বিদ্যালয়ে কোনও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী না থাকলেও তাদের নামে ভুয়ো তালিকা তৈরী করে টাকা হাতিয়েছেন ওই শিক্ষক। একইসাথে কন্যাশ্রীর ভুয়ো নাম দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করবার অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষক তথা তৃণমূল নেতা শুভেন্দু মাহাতর বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের পরেই মঙ্গলবার বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিডিও।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ জানিয়েছেন, আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। জেলা শাসকের সাথে কথা বলবেন এব্যাপারে। বৃহস্পতিবার দলীয় বৈঠক করে দলগতভাবে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তৃণমূল নেতৃত্বরা জড়িত রয়েছে এই ঘটনায়। বৃহত্তর চক্রান্ত কাজ করছে এই দুর্নীতির পিছনে।