আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ১৬ আগস্ট: তৃণমূল জেলা সভাপতির পদ যদিও এখনও অনুব্রত মণ্ডলের দখলে, কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে বীরভূমে এবার গুরুত্ব বাড়ল কাজল শেখের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম বার জয়ী হয়েই সরাসরি জেলা পরিষদের সভাধিপতি হলেন অনুব্রত বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা কাজল শেখ। যদিও শপথ নিয়েই কাজল শেখের মুখে অনুব্রত বন্দনা।
তিনি বলেন, অনুব্রত তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। যেটুকু রাজনীতি তিনি শিখেছেন, তা অনুব্রতর হাত ধরেই। বুধবার বীরভূম জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন ছিল। বোর্ড গঠনের পর জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসাবে শপথগ্রহণ করেন কাজল শেখ ওরফে ফজলুল হক। প্রথম বারের জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েই সভাধিপতির আসনে বসলেন তিনি। বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যও তিনি। গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত বীরভূমে কার্যত একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল অনুব্রতর। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন অনুব্রতর কথাতেই সেখানে যাবতীয় কাজকর্ম চলত দলের। কাজল বরাবরই অনুব্রতর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত। অনুব্রতর গ্রেফতারির পরই জেলা রাজনীতিতে উত্থান শুরু হয় তাঁর। অনুব্রতের গ্রেফতারির পর বীরভূম জেলায় দলের রাশ টেনে রাখতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোর কমিটি তৈরি করা হয়। কোর কমিটি তৈরি করেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই কমিটির সদস্যও করা হয়েছিল কাজলকে। আর তাই জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে কাজলকে বসানো হতে পারে বলে জল্পনা উঠেছিল। সেই জল্পনা সত্যি করে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি হলেন কাজল। তাকে জেলা পরিষদে শপথ বাক্য পাঠ করালেন জেলাশাসক বিধান রায়। কাজলের পাশাপাশি শপথগ্রহণ করলেন আরও ৫২ জন সদস্য।
বুধবার বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতির পদে বসার পর তৃণমূল নেতা কাজল শেখ জানান, অনুব্রতর দেখানো পথেই চলতে চান তিনি। কাজল বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। যেটুকু শিখেছি ওঁর থেকেই শিখেছি। ওঁর দেখানো পথেই চলতে চাই।”
সভাধিপতি হয়ে শপথগ্রহণের মঞ্চ থেকে জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন কাজল। তিনি বলেন, “দলের কাউকে দুর্নীতি করতে দেবেন না। এখন থেকে আমি অঞ্চলে অঞ্চলে ঘুরব। কোনও রকম দুর্নীতি সহ্য করব না। আমি খাবও না, কাউকে খেতেও দেব না।” লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার দু’টি আসনে তৃণমূল লক্ষাধিক ভোটে জয়লাভ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাজলের গুরুত্ববৃদ্ধির পাশাপাশি বীরভূমে জেলা পরিষদের সহ সভাপতি করা হয়েছে স্বর্ণলতা সোরেনকেও। মহঃ বাজার থেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন তিনি। স্বর্ণলতার দাদা আবার দেউচা পাঁচামির খনি আন্দোলনের বড় নেতা, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত। তাই স্বর্ণলতাকে গুরুত্ব দেওয়ার নেপথ্যে অন্য কৌশল রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে আদিবাসী মনে ব্যাপক জনসমর্থন গড়ে তুলতেই এই পদক্ষেপ।
অন্যদিকে, কাজলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন প্রাক্তন সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে পর পর দু’বার জেলা সভাধিপতি ছিলেন সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ। মনে করা হচ্ছিল তৃতীয় বারও সভাধিপতির পদ তিনিই পাবেন। কিন্তু দল কাজলকে সভাধিপতি করে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক উদ্ধারের কৌশল নিয়েছে। কারণ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুরারই, নলহাটি, রামপুরহাট, দুবরাজপুর এবং সিউড়ির মতো বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ধস দেখা দিয়েছে। তাই সংখ্যালঘু ভোট ফেরাতেই কাজলকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি করা হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তবে এদিন শপথগ্রহণের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ শতাব্দী রায়ও। মঞ্চে শপথ থেকেই কাজলের অনুগামীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শতাব্দী। তিনি বলেন, “আপনাদের ভাইজান সভাধিপতি হয়েছে। খুব আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু ভাইজানের নাম যাতে খারাপ না হয় সেটাও আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। কোনও বাজে কাজ করা যাবে না।”