সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ২৭ অক্টোবর: রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃণমূলের দীর্ঘদিনের সৈনিক তিনি। তৃণমূলের পথ চলার একেবারে শুরুর দিন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী তিনি। রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা হয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। সুরেন্দ্রনাথ ল’ কলেজে পড়াশোনার সময় থেকেই কংগ্রেসি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে কংগ্রেস ছেড়ে মমতার সঙ্গে তৃণমূলে। যাঁরা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বারাসত আদালতের সরকারি আইনজীবী। তাঁর কথায়, ‘উত্তর ২৪ পরগনার অলিখিত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। এছাড়া গোটা জেলায় তাঁর প্রভাবে চলে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা।

বনগাঁ, হাবড়া সহ অশোকনগর পৌরসভার গোটা বিষয় চলে তাঁর কথায়। পৌরসভাগুলিতে কে কোন জায়গা পাবে তা ঠিক করতেন তিনি। তাঁর নাম ভাঙিয়ে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা ও দলের কিছু যুব নেতা আজ কোটিপতি। যদিও ইডির কাছে এমন তথ্য আছে বলে সূত্রের খবর। এদিন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, এটা হওয়ার ছিল। গরিব মানুষের মুখের খাবার কেড়ে দুর্নীতি করে প্রচুর অর্থ কড়েছে। জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে সামান্য টিউশান করে, তাঁর অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা। এতো সম্পত্তি কোথা থেকে করেছেন তাঁর জবাব তো রাজ্যবাসীকে দিতে হবে। যদিও এর পেছনে যারা আছে এবং সঙ্গে যারা আছে তারা কেউ ছাড় পাবে না।
পুরনো দিনের স্মৃতি উসকে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী জানালেন, অতীতে কংগ্রেসে থাকাকালীন হোক, কিংবা তৃণমূল রাজনীতিতে বার বার উত্তর ২৪ পরগনায় সংগঠনের জন্য দল ভরসা রেখেছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উপর। বিশ্বজিৎবাবুর মতে জ্যোতিপ্রিয়র এই ক্যারিশ্মা, তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার জন্যই। বলছেন, “ওঁর সাংঠনিক দক্ষতা খুব ভাল। দলেরও অত্যন্ত কাছের লোক ছিল। ওঁর চোখ দিয়েই উত্তর ২৪ পরগনা দেখা হত।” তবে দল ক্ষমতায় আসার পর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আগের মতো আর থাকেনি বলেই জানাচ্ছেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধু তথা আইনজীবী বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। যদিও ব্যক্তিগত স্তরের সম্পর্ক এখনও রয়েছে বলে মানছেন তিনি।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে যে জেলার দলীয় সংগঠন অনেকটা নির্ভর করে এসেছে, সে কথা মানছে তৃণমূল শিবিরও। তৃণমূল মুখপাত্র তথা শাসক দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ যেমন আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেই দিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সংগঠনকে ‘ডিস্টার্ব’ করতেই জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। দলের দীর্ঘদিনের পুরনো নেতার গ্রেফতারির নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যর কথাও উসকে দিচ্ছে তৃণমূল। কুণাল ঘোষের বক্তব্য, এসব করে সংগঠনকে প্রভাবিত করা যাবে না। বরং লড়াই আরও তীব্র হবে বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কুণাল।

