পুরুলিয়ার সূচ কাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে রায় পিছলো, আদালতে লুটিয়ে পড়ল মঙ্গলা

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ২০ সেপ্টেম্বর: সাজা ঘোষণার দিন ধার্য্য হয়েও রায় দান হল না। পুরুলিয়ার সূচ কাণ্ডে দোষী সনাতন গোস্বামী ওরফে ঠাকুর ও মঙ্গলার সাজা ঘোষণা হল না। রায় দান স্থগিত রাখলেন বিচারক। পুরুলিয়ার জেলা ও দায়রা আদালতের দ্বিতীয় কোর্টের বিচারক রমেশ কুমার প্রধান পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ দুপুর ১ টায় এই মামলার সাজা ঘোষণার সময় ছিল। সেই মতো পুলিশ দুই দোষী সাব্যস্তকারীকে আদালতে হাজির করে। আদালতে বিচারক তাদের দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি আরেকবার মনে করিয়ে দেন। তার পর শুরু হয় রায় দান প্রক্রিয়া। সেই মামলার সরকারি আইনজীবী আনোয়ার আলী আনসারি বিচারকের কাছে দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রার্থনা করেন। আর তার পরই বিবেচনার জন্য রায়দান স্থগিত রাখেন। আগামী কাল এই মামলার রায় দানের দিন ধার্য্য করেছেন বিচারক।

এই কথা শোনার পর মৃত শিশু কন্যার মা মঙ্গলা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তিনি কোনও মতেই পুলিশের সঙ্গে যেতে চাইছিলেন না। কান্নায় চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মহিলা পুলিশ কর্মীদের হিমসিম খেতে হয়। এই বিচারের রায় শোনার জন্য আদালতে উপস্থিত হন মঙ্গলার মা মাধুরী মহন্ত। মাধুরী মেয়ে মঙ্গলাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। সেখানেই মাধুরী দেবী ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, মেয়ের প্রাক্তন স্বামী লক্ষ্মীকান্তর জন্যই এই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, দশ বছর আগে লক্ষ্মীকান্তর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মঙ্গলার। তার পর থেকেই কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকত। বিয়ের তিন বছর পর এই শিশুটির জন্ম হয়। তার পর লক্ষ্মীকান্ত দাবি করে এই শিশুটি তার নয়। অভিযোগ, তার পর থেকে মঙ্গলাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই থেকে মঙ্গলা বাপের বাড়িতে মায়ের কাছে থাকত। ওই সময়ই মঙ্গলাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সনাতন তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যা সুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সনাতনের বাড়িতে থাকত মঙ্গলা।

এই মামলার অন্যতম দোষী সনাতন দাবি করে বলেন, ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নয়। তিনি বিচার ব্যবস্থাকে অন্ধা কানুন বলে কটাক্ষ করেন আদালত চত্বরেই।

২০১৭- র ১২ জুলাই সন্ধ্যায় শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় জেলার দেবেন মাহাত সদর হাসপাতালে ভর্তি করে শিশুর মা এবং সনাতন ঠাকুর নামে ওই গৃহস্থের মালিক। শিশুর চিকিৎসা করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন শিশুর গোটা শরীরের বিভিন্ন স্থানে সূচ ফোটানোর ক্ষত রয়েছে। আঘাতের চিহ্ন ছিল যৌনাঙ্গে, বুকে ও চোখে মুখে ছিল ক্ষতের দাগ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১৪ জুলাই চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে জেলা কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার পুরুলিয়ার মফসল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই মামলায় গত শুক্রবার অভিযুক্ত দুই জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। আজ রায় ঘোষণার দিন ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *