শিক্ষক দিবসে রাধাকৃষ্ণনের মূর্তি, দুর্গাপুরে দামোদর নদের বালির চরে জীবনানন্দের ‘স্যান্ড আর্ট’ নজর কাড়ছে পর্যটকদের 

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ৫ সেপ্টম্বর: পুরির স্যান্ড আর্টের মনোরঞ্জন এবার দামোদরে। দেশ -বিদেশের সমুদ্র সৈকতের ‘স্যান্ড আর্ট’ নয়, পিকনিকের মরশুমে দুর্গাপুরে দামোদর নদের বালির চরে স্যান্ড আর্ট করে তাক লাগিয়েছেন দুর্গাপুরের যুবক জীবনানন্দ রায়। যিশু থেকে এঞ্জেল – নাগকণ্যা থেকে নটরাজ একাধিক প্রতিমূর্তি বালি দিয়ে তৈরী করে পর্যটকদের মনোরঞ্জন দিচ্ছেন। তবে এটা তার পেশা নয়, নিছকই এটা তার নেশা। পর্যটকদের প্রশংসাই তার বড় পাওনা। এবার শিক্ষক দিবসে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের মূর্তি তুলে ধরল জীবনানন্দ। তার স্যান্ড আর্ট দেখে খুশি পর্যটকরা।

জীবনানন্দ রায়। দুর্গাপুর ব্যারেজ সংলগ্ন সীতারামপুর কলোনীর বাসিন্দা। দুর্গাপুর সংলগ্ন হলেও ওই এলাকাটি বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ব্লকের ঘুটগড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকার অধীনে। বছর ৩০ এর জীবনানন্দ পেশায় ঠিকাশ্রমিক। তবে পারিবারিক বৃত্তি শিল্পকলা। তাঁর বাবা বুদ্ধদেব রায়ের কাছে শিল্পকলায় হাতখড়ি জীবনানন্দের। মাটির কাজ সেভাবে এখন না করলেও, বাড়ির পাশে নদীর চরে বালিশিল্প বা স্যান্ড আর্টের নেশায় বিভোর। পিকনিকের মরশুমে শীতের সকালে কাজের ফাঁকে বালির চরে শুরু করে দেয় তার শিল্পকলার কাজ। নদীর চরে বালি দিয়ে তৈরী করে ফেলেন নিজের মনের মত বিশাল আকারের নানান মূর্তি। যদিও সারাবছর হাতে গোনা কয়েকজন যায় ওই ব্যারেজ এলাকায়। তাঁর তৈরী স্যান্ড আর্ট তেমন কারও নজরে পড়ে না। ব্যারেজের গেট খুলে দিলে জলাধারের জলে তাঁর তৈরী স্যান্ড আর্ট জলে ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। পিকনিকের মরশুমে ব্যারেজে ভিড় করে পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার বহু মানুষ। আর এই সময় জীবনানন্দবাবুর স্যান্ট আর্ট তাক লাগাছে সাধারণ মানুষ’কে। সেলফি জোন হওয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর শিল্প চর্চা ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। যিশু থেকে এঞ্জেল – নাগকণ্যা থেকে নটরাজ একাধিক প্রতিমূর্তি তৈরী করে নজর কেড়েছে পর্যটকদের। ৫ সেপ্টম্বর শিক্ষক দিবসের দিন বাড়তি নজর কাড়ল ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের মূর্তি। এদিন বিকেলে দামোদরের বালির চরে ওই মূর্তি তুলে ধরেন। বৃষ্টির চোখ রাঙানি তার শিল্পকলাকে ধুয়ে দেওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেটা হয়নি। ফলে বিকেলে পর্যটকরা দারুন উপভোগ করেছে জীবনান্দের শিল্পকলা।

আগত পর্যটকরা বলেন, “দুর্গাপুর ব্যারেজের জলধার ছাড়া তেমন কিছু আকর্ষণীয় নেই। তবে বালির চরে হেঁটে সমুদ্র সৈকতের খানিকটা অনুভূতি মেলে। তার মধ্যে বালির চরে ওই যুবককের স্যান্ড আর্ট খুবই আকর্ষণীয় ও মুগ্ধ করে তোলে। এটা বাড়তি পাওনা।”

জীবনানন্দবাবু বলেন, “ছোটো থেকে এটা আমার নেশা। বিগত ছ’বছর ধরে এভাবে মানুষকে আনন্দ দিয়ে আসছি। সারাবছর দেখার কেউ থাকে না। নদীর জলে ধুয়ে যায়। পিকনিকের মরশুমে মানুষের মনরঞ্জন করা হয়। অনেকে টাকা দিতে চায়। কিন্তু আমি টাকার জন্য করি না। আমি তৈরী করি, মানুষজন দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। প্রশংসা করেন৷ এটাই বড় পাওনা।” তিনি আরও বলেন,” তবে আমার ও আমার পরিবারের শিল্পকলার কোনো সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে।”

তার এই প্রতিভা প্রকাশ্যে এনে দর্শকদের প্রসংশা কুড়ানো তাঁর দীর্ঘদিনের নেশা বলে দাবি এলাকাবাসীর। বর্তমানে তাঁর স্যান্ড আর্টের সৌন্দর্যায়ন দুর্গাপুর ব্যারেজের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি শিল্পাঞ্চলবাসীর। প্রায় দিনই বালির চরে নানান স্যান্ড আর্ট তৈরী করে আকর্ষিত করেন পর্যটকদের। তাঁর হাতের নিখুঁত স্যান্ড আর্ট দেখার পাশাপাশি সেখানে সেলফি তুলতে ভিড় জমাচ্ছে ব্যারেজে আসা মানুষজন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *