আমাদের ভারত, কলকাতা, ১০ ফেব্রুয়ারি:
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার পরীক্ষা অফলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হল। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক শ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষিকা ক্যাম্পাসের ক্লাসে না এসে অনলাইনে পড়াতে চাইছেন বলে ছাত্রছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ। পাল্টা অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, অফলাইন ক্লাসে গিয়ে তাঁরা দেখছেন, ছাত্রছাত্রীরাই গরহাজির। পঠনপাঠন নিয়ে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যে এমনই তরজা চলছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। প্রশ্ন উঠছে, যাদবপুরের মতো নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠন নিয়ে এমন পরিস্থিতি চলবে কেন?
করোনায় দীর্ঘ কাল বন্ধ থাকার পরে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও সেখানকার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছু পড়ুয়া অভিযোগ করেন, তাঁরা অফলাইনে ক্লাস করতে চান। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশ ক্লাসে না এসে অনলাইনে পড়ানোর জন্য লিঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকদের তরফে জানানো হয়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের অনেকেই ক্লাসে আসছেন না। শিক্ষকরা অনেক সময়েই ক্লাসে গিয়ে দেখছেন, ক্লাসঘর ফাঁকা। না-পড়িয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
ক্লাস যে এ বার শুধু ক্যাম্পাসেই হবে, এ দিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বৈঠকে সেই বিষয়ে আলোচনা হয়। আবুটা সহ সভাপতি তরুণকান্তি নস্কর এই প্রতিবেদককে জানান, “ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল সভা সেমিস্টার পরীক্ষা অফলাইনের পক্ষে মত দেওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু ওই সভায় ছাত্র সংসদের তরফ থেকে ঘুরিয়ে অভিযোগ করা হয় যে শিক্ষকরা অফলাইন ক্লাস নিচ্ছেন না। অথচ চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়ারা নতুন করে পঠন-পাঠন শুরুর পর থেকে ক্লাসে আসছে না। বেশিরভাগ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়ারাও একইভাবে ক্লাসমুখী নয়।
শিক্ষকরা প্রতিদিন তাদের জন্য অপেক্ষা করে করে ফিরে যাচ্ছেন। সিলেবাস শেষ করা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। যদিও অন্য বর্ষগুলির জন্য যথারীতি শ্রেণিকক্ষ ক্লাস চলছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্কের একটা দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। তার দ্বারা ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ই উপকৃত হন, পঠন-পাঠন-গবেষণার ক্ষেত্রে তা পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। ছাত্র সংসদ নেতৃত্বের বর্তমান ভূমিকা তাকে বিঘ্নিত করবে। সকল পক্ষকে সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে অনুরোধ করছি।”
প্রসঙ্গত, অফলাইন ক্লাস চেয়ে মঙ্গলবার উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের দফতরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সংসদ (ফেটসু)। আর এ দিন উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে শিক্ষক সংগঠন আবুটার সহ-সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক তরুণ নস্করের অভিযোগ, চূড়ান্ত বর্ষের কিছু ছাত্রছাত্রী সহ-উপাচার্য এবং কোনও কোনও বিভাগীয় প্রধানকে নানান অজুহাত দেখিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা অফলাইনে ক্লাস করতে পারবেন না। কোনও কোনও বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়ারাও
আসছেন না। ফলে ক্লাস হচ্ছে না। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ক্লাস না-হওয়ার কারণ হিসেবে শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ, বেঞ্চ নেই, শিক্ষকরা আসছেন না ইত্যাদি অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তরুণবাবু বলেন, “চূড়ান্ত বর্ষের ক্লাসে পড়াতে গিয়ে পরপর দু’দিনই দেখি, কোনও ছাত্রছাত্রী ক্লাসে নেই!”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেক শিক্ষকই ক্যাম্পাসে ক্লাস করাতে গিয়ে বহুক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে আসছেন। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসরুমে থাকছেন না। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা টিচার-স্টুডেন্ট কমিটি বা শিক্ষকদের কাছে এক রকম আর্জি জানাচ্ছে। আবার ছাত্র সংসদ জানাচ্ছে অন্য দাবি।”