আমাদের ভারত, ১০ জুলাই: রাম সেতু সম্পর্কে বড় তথ্য দিলো ইসরো। নাসার আইসিইস্যাট-২ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে রাম সেতুর সমুদ্রে জলে নিমজ্জিত থাকা অংশের মানচিত্র তৈরি করল ইসরোর যোধপুর এবং হায়দ্রাবাদ ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের গবেষকরা। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওই স্যাটেলাইটের তথ্য ব্যবহার করে রাম সেতুর নিমজ্জিত অংশের পূর্ণ দৈর্ঘ্যের একটি ১০ মিটার রেজলিউশনের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। রামায়ণেও এই রামসেতুর উল্লেখ রয়েছে।
রামায়ণের কাহিনী অনুসারে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার জন্য বানর সেনার সাহায্যে সমুদ্রের উপর সেতু তৈরি করেছিলেন শ্রীরাম। অনেকেই দাবি করেন, রাম সেতু আসলে একটি প্রাকৃতিক গঠন। ইসরোর মানচিত্রে কি সেই তথ্য উঠে এসেছে? গিরিবাবু ডান্ডাবাথুলার নেতৃত্বে গবেষণা দলটি দেখেছে রাম সেতুর দুই পাশের তির্যক ঢালে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এই ঢালের অসামঞ্জস্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে পক প্রণালীর তুলনায় মান্নার উপসাগরের জলের বস্তুগত শক্তি বেশি।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রাম সেতুর প্রায় ৯৯.৯৮ শতাংশ অগভীর এবং অতি গভীর জলে নিমজ্জিত থাকে। মাত্র ০.০২শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে থাকে এবং উপর থেকে দেখা যায়। তারা আরো দেখেছেন, রাম সেতুর কাঠামো বরাবর ১১টি সংকীর্ণ জলের চ্যানেল আছে। এই চ্যানেলগুলি থেকে মান্নার উপসাগর এবং পক প্রণালীর মধ্যে দিয়ে জল প্রবাহিত হয়। এই চ্যানেলগুলি থাকার জন্য সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষা পেয়েছে রাম সেতুর কাঠামো।
কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন, রামসেতু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি? নাকি কৃত্রিম ভাবে তৈরি? ইসরোর বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের নিচে ডুবে থাকা রাম সেতুটি প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি। রাম সেতু আসলে ভারতের ধনুশকোডি থেকে শ্রীলঙ্কার তালাই মান্নার দ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্রের নিচে স্থলভাগের ধারাবাহিকতা বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের কথায়, “আমাদের গবেষণার ফলাফলগুলি থেকে এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছিরাম সেতুর দুই পাশে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা অত্যন্ত ঢেউ খেলানো। অতি অগভীর জলের মধ্যে আকস্মিক গভীর খাদ রয়েছে।”
এর আগে স্যাটেলাইট থেকে রামসেতু সমুদ্রের উপর উন্মুক্ত অংশগুলির মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। এই এলাকার সমুদ্র অত্যন্ত অগভীর, কোথাও এক মিটার, কোথাও ১০ মিটার গভীরতা। ফলে এলাকায় জাহাজে করে মানচিত্র তৈরি করা কঠিন। তাই নাসার স্যাটেলাইট থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠে লেজার রশ্মি বাউন্স করিয়ে এই নয়া মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রের জলে প্রায় ৪০ মিটার গভীর পর্যন্ত সমুদ্র তলের হদিশ দিতে পারেন নাসার উপগ্রহের এই লেজার।
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের মন্দিরে যে ইতিহাস নথিভুক্ত আছে, তাতে বলা হয়েছে ১৪৮০ সাল পর্যন্ত রামসেতু সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে ছিল। একটি শক্তিশালী সাইক্লোনের পর সেতুটি সমুদ্রের জলের নিচে ডুবে যায়।