আমাদের ভারত, শান্তিনিকেতন, ১৬ জানুয়ারি: ঐশীর পর স্বপ্নিল? বিশ্বভারতীতে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের সিএএ নিয়ে বক্তৃতায় বাধা দেওয়ার জের? বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে রাতের অন্ধকারে বাম ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ জেএনইউ বিতর্কের স্মৃতিকে আরএকবার উসকে দিল। শুধু ক্যাম্পাসেরই নয়, হামলাকারীরা হাসপাতালে ঢুকেও মারধর করেছে বাম ছাত্রদের। এই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে এবিভিপির বিরুদ্ধে।
কালরাতে বাম ছাত্র সংগঠনের দুই নেতা স্বপ্নিল মুখার্জি এবং ফাল্গুনী পানকে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে মারধর করার অভিযোগ ওঠে এবিভিপির বিরুদ্ধে। ওই দুই ছাত্রনেতাকে উদ্ধার করে পিয়ারসন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও এবিভিপির ছাত্ররা চড়াও হয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। অভিযোগের তির তিন ছাত্র নেতা অচিন্ত্য বাগদী, সাবির আলি ও সুলভ কর্মকারের বিরুদ্ধে৷ এই ঘটনায় অচিন্ত্য বাগদি সহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
যদিও অভিযুক্ত অচিন্ত্য বাগদীর দাবি, তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিশ্বভারতী ইউনিটের সভাপতি। অচিন্ত্য ও সাবির দুজনেই দাবি করেন, বহিতাগতরা কেন আসছে বিশ্বভারতীতে তার প্রতিবাদ করাতেই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা সুলভ কর্মকার নামে এক ছাত্রকে মারধর করে। পূর্বপল্লীর বয়েজ হোস্টেলে বহিরাগতদের জড়ো করেছিল বাম পন্থীরা।
ছবি: অভিযুক্ত অচিন্ত্য বাগদি।
বিশ্বভারতীর তৃণমূল সংগঠন তরফে দাবি করা হয়, অচিন্ত্য বাগদী প্রথম থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তৃণমূল করতেন। তারপর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু নতুন উপাচার্য আসার পর, অচিন্ত্য বাগদী এবিভিপি করতে শুরু করে। এবিভিপি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছে অভিযুক্তরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত ছিল। ছাত্রঐক্য আঙুল তুলছেন উপাচার্যের দিকে। তাঁদের মতে, অভিযুক্তরা উপাচার্যের ছায়াসঙ্গী, যা হয়েছে তাতে মদত রয়েছে উপাচার্যেরই। বিশ্বভারতীতে সিএএর সমর্থনে হওয়া সভার বিরোধিতারই মাশুলই দিতে হচ্ছে বামছাত্রদের।
তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য তথা তৃণমূল শিক্ষা বন্ধু সংগঠনের রাজ্য সভাপতি গগন সরকার অভিযোগের আঙুল তুলেছেন উপাচার্যর দিকে। তাঁর দাবি ২০১৮ সালে অচিন্ত্যকে বহিস্কার করা হয়। তিনি একথা বললেও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার সঙ্গে এক ছবিতে দেখা যায় অভিযুক্ত অচিন্ত্য বাগদীকে। এই নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি বোলপুরে নেই যা বলার সব গগন সরকার বলবে। কে কোথায় আমার সঙ্গে ছবি তুলেছে তার দায় আমার না কি?
বিশ্বভারতীতে ছাত্রের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা করে ভাস্কর মিশ্র বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে এবিভিপি কোনও যোগাযোগ নেই। বাম ছাত্র সংগঠনগুলি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের বদনাম করতে আমাদের নাম ছড়িয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।
এই নিয়ে অনুব্রত মন্ডল বলেন, আমি বিশ্বভারতী নিয়ে কিছু বলব না। ওটা গগন সরকার ও চন্দ্রনাথ সিনহারা দেখেন। তবে কি এমন মারল যে পিয়ারসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে? ওখানে তো ছোট খাটো কিছু হলে চিকিৎসা হয়।
বাম ছাত্র ঐক্যের পক্ষ্য থেকে উপাচার্যকে দেওয়া ডেপুটেশনে হামলায় অভিযুক্ত হিসাবে এবিভিপির কথা উল্লেখ করলেও, দুই ছাত্র হামলার ঘটনায় রাহুল পাল বোলপুর শান্তিনিকেতন থানায় যে অভিযোগ করেছেন সেখানে কোথাও এবিভিপির কথা উল্লেখ করা হয়নি।
জল্পনা অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েই। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বলছেন, অভিযুক্তদের শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের পতাকা হাতেই দেখা গিয়েছে শেষ কয়েক বছর। কেউ আবার বলছেন, উপাচার্য ঘনিষ্ঠতাই এদের সবচেয়ে বড় পরিচয়। যা হয়েছে তাঁর দায় উপাচার্যেরই।
গতকাল রাতের ঘটনার জেরে আজ সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী। সেন্ট্রাল অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা। তারা অবস্থান বিক্ষোভ করে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় তারা। পরে সেন্ট্রাল অফিসের সামনে মিটিং করে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা। তারপরই তারা মিছিল করে যায় শান্তিনিকেতন থানায়। সেখানেও তারা অবস্থান বিক্ষোভ করে। ততক্ষণে অবশ্য অচিন্ত্য বাগদী ও সাবির আলিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। থানায় ডেপুটেশন দেওয়ার পর বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা জানায় আগামীকাল বিকেল চারটের সময় তারা বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
এই ঘটনায় ধৃত দুই ছাত্র নেতাকে বোলপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশ ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতে চেয়ে আবেদন জানায়। বিচারক ৯ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন।