গাছ থেকে বিজেপি কর্মীর দেহ উদ্ধার ঘিরে তীব্র উত্তেজনা বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির গ্ৰামে, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৮ নভেম্বর:
গাছে বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ ঘিরে চরম উত্তেজনা ছড়াল বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার নিধিরামপুর গ্রামে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে বলে জানাগেছে। আজ সকালে ওই যুবকের মৃতদেহ ঝুলতে দেখে গ্ৰামের বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেয়।

মৃত যুবকের নাম শুভদীপ ওরফে দীপু মিশ্র (২৫)। তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। গ্রামে অত্যন্ত জনপ্রিয় হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। খবর পেয়েই গ্রামে আসেন বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি।আসেন তৃণমূলের গঙ্গাজলঘাটি ব্লক ২- এর সভাপতি নিমাই মাজি। চন্দনা বাউরি বলেন, দীপু যেহেতু বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তাতে শাসক দলের রোষের মুখে পড়েছিল। দীপু মিশ্রর মৃত্যুতে রহস্য ঘনীভূত হলেও শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নিমাই মাজি বলেন, এটা সম্পূর্ণ পারিবারিক ঘটনা। গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের শেষ প্রান্তে শিব মন্দির। শিব মন্দির চত্বরেই রয়েছে একটি বট গাছ। তাতে নাইলনের দড়িতে ঝুলে রয়েছে মৃত দেহটি। গোটা গ্রাম ভেঙে জনতার কৌতুহলী জবাব ‘এটা একটা পরিকল্পিত খুন। কারণ দীপুর হাত দুটি গামছা দিয়ে বাঁধা রয়েছে। খুন না হলে হাত বাঁধা অবস্থায় সে গলায় ফাঁস লাগলো কি করে?

দীপুর মত একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর ওর বাবা নন্দ মিশ্র। তিনি বুকে পাথর চাপা রেখে জানালেন, তাদের প্রতিবেশী এক গৃহবধূর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিল সন্দেহে ওই বধূর স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন মিলে ছেলেকে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। ওদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন নন্দবাবু।

দীপুর এক বন্ধু সুমন দুবে বলেন, দীপু অত্যন্ত ভালো ছেলে। গ্রামের পাশে একটি ফেরো কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। মাইনের টাকা দিয়ে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতেন। বিজেপি করলেও তৃণমূল, সিপিআইএম সবার প্রিয় ছিলেন তিনি। ওই বধুর সঙ্গে একটা অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার। সেই আক্রোশেই খুন হতে হল। মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত তারা শিব মন্দিরে বসে গল্প করেছেন। তারপর রাতে কখন ঘটনা ঘটেছে তা টের পেলাম না।

গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানাগেছে, ওই বধূর ২টি নাবালক পুত্র সন্তান রয়েছে। বাড়িতে ওই বাচ্চা ২টি ছাড়া কেউ নেই। সকলেই পলাতক। ওই বধূকে প্রতিবেশীরা টেনে বের করে মারধর শুরু করে। পুলিশ উত্তেজিত জনতার হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে আটক করে নিয়ে যায়। সেই সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের দাবি, ওই বধূকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেল, দিন সাতেক আগে ওই বধূ পালিয়ে গিয়ে তাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেন। আত্মীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বধূর স্বামী মহিলাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ১ দিন পর। অভিযোগ সেই সময় দীপুকে শাসিয়ে বলে আসেন গ্রামে ফিরলে তার ব্যবস্থা করা হবে।

পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পরে থানার সামনে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালাতে থাকে। বিকেল পর্যন্ত অবরোধের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। চন্দনা বাউরির পরিষ্কার অভিযোগ, কিছুদিন ধরেই তাকে তৃণমূলের এক নেতা হুমকি দিচ্ছিল। তিনিও সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন। কিন্তু পুলিশ সঠিক তদন্ত করবে না বলেই তার বিশ্বাস।

এদিকে দলীয় কর্মীর এই পরিণতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী।তিনি এই মৃত্যুর সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নিমাই মাজি পাল্টা দাবি করেছেন, এই ঘটনাকে নিয়ে বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে। তিনিও এর সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *