আমাদের ভারত,১০ জানুয়ারি: আমাদের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে ভারতের মধ্যস্থতা চেয়েছিল ইরান । আর সেই মত উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল ভারত। ইতিমধ্যেই উপসাগরীয় অঞ্চলে একাধিক দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছে ভারত।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানিয়েছেন, পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে, একইসঙ্গে ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আলোচনা করে উত্তেজনা কমানোর সূত্র খুঁজতে কথাবার্তাও শুরু করেছেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারত চায় ওই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক।
রবীশ কুমার আরোও জানান, আমেরিকা-ইরান সংঘাত নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ওমান, কাতার,জর্ডন এবং আমেরিকার বিদেশমন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। একইসঙ্গে শুক্রবার আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর। নয়াদিল্লি জানিয়েছেন ইরান ও আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। কিভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় তার কথাও হয়েছে তাদের মধ্যে। সকালে একই বিষয়ে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে রাজনাথ সিংয়ের ।
ইরান-আমেরিকা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ভারতকে একরকম মধ্যস্থতার জন্য বার্তা দিয়েছে তেহরান। ভারতে ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি চেগেনি বলেছেন, “আমেরিকার সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে ভারতের শান্তি প্রয়াসকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন।” পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে তা ইরান ভালো রকমই জানে। সেই কারণেই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ইরান। একই সঙ্গে ভারতের মত আমেরিকার কৌশলগত অংশীদার আরও কিছু দেশের কাছে শান্তি উদ্যোগের বার্তা পাঠানো শুরু করে তেহরান। ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি চেগেনি বলেছেন, “সাধারণত গোটা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে ভারত খুবই ভালো ভূমিকা পালন করে। একইসঙ্গে এই অঞ্চলের প্রতিনিধিও তারাই। উত্তেজনা কমাতে সমস্ত রাষ্ট্রের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। বিশেষ করে ভারতকে। কারণ ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র।” চেগেনি আরোও বলেন, “আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই শান্তির পক্ষে। ভারতের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”
এদিকে ভারতের তরফে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু হওয়ার কারণ হিসেবে কূটনৈতিক মহলের ধারণা, মূলত বাণিজ্যিক এবং পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই ভারত এটা করছে। একইসঙ্গে যুযুধান দুই পক্ষের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে এবং আলাদা কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুরক্ষিত রাখার চেষ্টাও করছে দিল্লি। তবে সম্প্রতি সংঘাত শুরু হবার পর আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সক্ষম হয়েছে ভারত। যা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু পরিস্থিতি যদি আরো জটিল হয়ে ওঠে তাহলে নিরপেক্ষ থাকাটাও অসম্ভব হয়ে উঠবে ভারতের পক্ষে। তাই উত্তেজনার পারদ আরও উদ্ধমুখী হবার আগেই শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে ভারত ইরান সম্পর্কের অন্যতম স্নায়ুকেন্দ্র হচ্ছে চাবাহার বন্দর। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ার বাজারে পৌঁছানোর এটি একমাত্র চাবিকাঠি। এটাও ভারতের এই উদ্যোগের আরও একটা বড় কারণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। একই সঙ্গে এই সংঘাতের আবহে দেশীয় বাজারে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাহিদা অনুযায়ী তেলের যোগান মিললেও। তার জন্য কয়েকগুণ বেশি খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। তাই এই সংঘাতের অবসান ভারতের পক্ষে মঙ্গলদায়ী।
তবে বৃহত্তর স্বার্থে ইরান ও আমেরিকার মধ্যে শান্তি ফেরানোর প্রয়াসে ভারতে শরিক হওয়া নতুন বছরের মোদী সরকারের বিদেশনীতির অন্যতম সফলতা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কারণ এরফলে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের গুরুত্ব আরোও অনেকখানি বেড়ে যাবে।