আমাদের ভারত, ১৬ জুলাই: উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি বাঁচাতে ভারত সরকার সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। ভারত লিখিতভাবে এ কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক এক বিবৃতিতে লিখেছে, “আমরা গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অবস্থিত পৈতৃক সম্পত্তি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
বাড়িটি তার ঠাকুর্দা এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন সম্পত্তিটি জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাংলার সাংস্কৃতিক নবজাগরণের প্রতীক হিসেবে ভবনটির ঐতিহাসিক মর্যাদা বিবেচনা করে, ধ্বংসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সাহিত্যের জাদুঘর এবং ভারত ও বাংলাদেশের অভিন্ন সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে এর মেরামত ও পুনর্নির্মাণের বিকল্প সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা বাঞ্ছনীয়। ভারত সরকার এই উদ্দেশ্যে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক।”
এর আগে, স্মৃতিজড়িত ওই বাড়ি বাঁচাতে বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত।
এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। রায় পরিবার বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করবো, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় রোডের বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাদেমির বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। দেড় শতাধিক বছরের পুরনো বাড়িটির মালিক প্রয়াত জমিদার হরিকিশোর রায়। তিনি ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পালক পিতা। উপেন্দ্রকিশোর দীর্ঘদিন ওই বাড়িতে বসবাস করেছেন। বহু বছর বাড়িটি বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাদেমির ময়মনসিংহ জেলার অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হত। জানা যাচ্ছে, শিশু অ্যাকাদেমিই বাড়িটি ভেঙ্গে বহুতল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে বাড়িটির সামনের অংশের প্রায় পুরোটাই ভাঙ্গা হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ হস্তক্ষেপ করায় ভাঙ্গার কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল।
ওই বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার দায়িত্বে আসীন আধিকারির সাবিনা ইয়াসমিন শিশু অ্যাকাদেমির কাছে বাড়িটির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য তলব করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকাভুক্ত না হলেও একশো বছরের বেশি পুরনো বাড়ি তাদের না জানিয়ে ভাঙ্গার অনুমতি নেই। বিশেষ করে বাড়িটির সঙ্গে যেহেতু বিশিষ্ট মানুষদের স্মৃতি জড়িয়ে তাই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
এদিকে, এমন ইতিহাস বিজড়িত বাড়ি ভাঙ্গা হচ্ছে জানতে পেরে বহু মানুষ সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন। তাদের বক্তব্য, এইভাবে হেরিটেজ বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলা হলে দেশের ইতিহাস হারিয়ে যাবে।
ময়মনসিংহ শিশু অ্যাকাদেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মহম্মদ মেহেদী জামানের বক্তব্য, প্রাচীন বাড়িটি এমনীতেই ভেঙ্গে পড়ছিল। সেই কারণে ২০০৭ থেকে শিশু অ্যাকাদেমি আর বাড়িটি ব্যবহার করত না। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানে বহুতল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাড়িটি ভাঙ্গার খবর পেয়ে সেটি পরিদর্শনে যান ময়মনসিংহের বাসিন্দা গবেষক ও লেখক স্বপন ধর। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মুক্তাগাছার জমিদার মহা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী সমমনা হিতাকাঙ্ক্ষীদের নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে ছিল হরিকিশোরদের পরিবারও। যে বাড়িটি ভাঙ্গা হচ্ছে সেটির পাশেই রয়েছে হরিকিশোর ভবন নামে আর একটি বাড়ি।
বাড়ি ভাঙ্গার খবর পেয়ে অনেকেই সেটি এবং হরিকিশোর সম্পর্কে নানা তথ্য সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, হরিকিশোর ছিলেন পেশায় আইনজীবী। সেই সব দিনে তিনি বিপুল অর্থ উপার্জন করে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হন এবং রায়চৌধুরী উপাধি লাভ করেন।”