সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, বনগাঁ, ১৮ আগস্ট:
সারাদেশে যখন ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের পতাকা তোলা হয়। তখন ১৮ অগস্ট আলাদা করে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলা হয় উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয়। ঐতিহ্যের এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছেন বনগাঁ আদালতের আইনজীবীরা।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, এই দিনটিতেই ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। এ বছর তা ৭৫ তম বর্ষ পূর্তি হিসেবে পালিত হল দেশজুড়ে। অন্যদিকে দেশের কিছু জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষেরা অপেক্ষা করে থাকেন ১৮ আগস্ট। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্টের ঠিক দু দিন পর অর্থাৎ ১৮ অগাস্ট দিনটি হল তাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস। উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁর সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয় প্রবীন মানুষদের কথায়, তৎকালীন পরাধীন ভারতের ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ১২ অগস্ট ঘোষণা করেছিলেন ভারতবর্ষকে ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দেওয়া হবে। সেই দিনটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হবে।
তৎকালীন ব্রিটিশ আধিকারিক সাইরিন রেডক্লিফ যিনি ভারতের মানচিত্রকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে তৈরি করেছিলেন তাতে তথাকথিত বাংলা থেকে গিয়েছিল খানিকটা বিতর্কিত অবস্থায়। বিশেষত বাংলার যে পার্টিশন করা হয়েছিল। তার মধ্যে বাংলার কিছু জেলা যেমন মালদা, নদিয়া সহ উত্তর ২৪ পরগনার হিন্দু জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। স্বভাবতই এর ফলে কিছুটা বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় ব্রিটিশ শাসকদের।
জানাগেছে, ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। সেদিন যখন ভারতের সর্বত্র জাতীয় পতাকা তোলা হল তখন দেখা যায় বনগাঁকে বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশভাগের এই সীমারেখার ম্যাপ তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল র্যাডক্লিফ সাহেব। তার তৈরি সেই ম্যাপ দেখে হতাশ হয়ে পড়েন বনগাঁর মানুষ। এটা ভুলবশত হয়েছে এটা বুঝতে পেরে তখনকার বনগাঁর ম্যাজিস্ট্রেট সি কুইন সাহেবের মাধ্যমে খবর পৌঁছায় দিল্লিতে।
এরপর ১৭ আগস্ট রাতে বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে বনগাঁ যশোর নয় স্বাধীন ভারতের ২৪ পরগনার অন্তর্ভুক্ত। এর পরদিন অর্থাৎ ১৮ আগস্ট সকালে বনগাঁর মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা তোলা হয়। সেই দিনটিকে স্মরণ করে আজও বনগাঁ আদালত চত্বরে ১৮ আগস্ট আলাদা করে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলেন বনগাঁ আদালতের আইনজীবীরা।
বনগাঁ ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস এ সম্পর্কে বলেন, বনগাঁর ইতিহাসে এমন একটি দিনকে আমরা স্মরণ করতে পেরে নিজেরা গর্বিত হই। আর তাই প্রতি বছর একইরকমভাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আজও এই অনুষ্ঠানের জন্য আদালত চত্বরে হাজির হয়েছেন আইনজীবী সহ স্থানীয় মানুষ।