স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১ মে: করোনা মহামারির প্রকোপে একেই মানুষ গৃহবন্দি,কর্মহীন। তার ওপর কচুরিপানার জেরে দশ দিন ধরে রোজগার বন্ধ ৩০টি পরিবারের। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী নদী। আর সেই নদীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকত ত্রিশটি পরিবার। জীবিকা হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিল মাছ ধরা। কিন্তু আজ তারা কর্মহীন।
মৎস্যজীবী গোকুল দাস জানান, এই নদীর ওপরেই আমার সংসার চলে। বছরে গড়পড়তা ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। এখন কোনো রকম কাজ করতে পারছি না, বাড়িতেই থাকছি। এমনিতেই বাংলাদেশের দর্শনা চিনিকল থেকে নোংরা তরল পদার্থ মাঝে মাঝেই এই নদীর জল দূষিত করে। তখন অনেক মাছ মারা যায়। আমরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হই। নদীর দু’পাশে যে সব গ্রাম আছে সেখান থেকে অনেকেই এখানে স্নান করতে আসে কিন্তু এখন সেটাও করা সম্ভব নয়।
মৎস্যজীবী মধু সরকার জানান, নৌকা নিয়ে দুর্গাপুর হাঁসখালি শ্রীনিবাসের মতো বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরে বেড়াতেন কিছুদিন আগেও। আগে নৌকাতে করে যাত্রী নিয়ে যেতাম কিছু রোজগার হতো। কিন্তু এখন নৌকা প্রায় উঠে গেছে। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে ব্রিজ করে দিয়েছে সরকার থেকে। ফলে এখানেও আমাদের পেটে টান পড়েছে। তাই এখন নৌকা করে শুধু আমরাই মাছ ধরে নিয়ে আসি।

মৎস্যজীবী যতীন ঘোষ জানান, হাঁসখালির বাবলাবন থেকে যদি কচুরিপানাগুলো বের করে দিত তাহলে আমাদের এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। বাবলাবন থেকে আস্তে আস্তে পুরো মাথাভাঙ্গা চূর্ণীকেই গ্রাস করে নিয়েছে কচুরিপানা। হাঁসখালি ব্রিজের নিচ থেকে কচুরিপানা গুলো যদি বের করে দিত তাহলে এরকম সমস্যা হতো না। ভৈরব চন্দ্রপুর, হাঁসখালি নিধিরপোতা, বেনালি, বাবলাবনের মত নদীর পার্শ্ববর্তী অনেক গ্রাম আছে যেখানে আমাদের মত অনেক মাছুরে আছে যারা এই নদীর ওপর নির্ভরশীল।
মৎস্যজীবী রবিন দাস জানান, এই নদীর ওপর অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে এখন তারা আর মাছ ধরতে পারছে না, কর্মহীন বেকার হয়ে বসে আছে। অনেকে ওখানে স্নান করে এখন তাও করতে পারছে না। আগেও এখানে কচুরিপানা ছিল তখন সেগুলো ভেসে ভেসে চলে যেত কিন্তু এখন কোনও জায়গায় নামার মতো পরিস্থিতি নেই। কৃষ্ণগঞ্জ, পোবাখালি, চন্দননগর, শ্রীনিবাসের মত নদীর পার্শ্ববর্তী এই গ্রামগুলিতেও এই পেশায় জড়িত অনেক মানুষ আছে যাদের এখন দুবেলা হাঁড়ি চড়ছে না। এখন সরকার যদি আমাদের না দেখে তাহলে আমরা বাঁচবো কি করে!


