পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৩ জুন: ওড়িশার বালেশ্বরে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু দক্ষিণ দিনাজপুরের এক ঠিকা শ্রমিকের। গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা ওই ঠিকা শ্রমিক করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেপেই ওইদিন যাচ্ছিলেন ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে। ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের আরো তিন পরিযায়ী শ্রমিক। আহতও বেশ কয়েকজন।
যদিও মোট ১৪ জন আহত তালিকা ইতিমধ্যে জেলায় এসে পৌছেছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা। তবে নিখোঁজ ও আহতদের মধ্যে যে প্রায় সকলেই ভিন রাজ্যে যাচ্ছিলেন কাজের সন্ধানে তা একপ্রকার নিশ্চিত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে গঙ্গারামপুরের পাঁচ যুবক ওইদিন করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেপে চেন্নাই অভিমুখে যাচ্ছিলেন। তাদের তিনজনের খোঁজ মিললেও বাকি দুজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
অন্যদিকে তপনের কসবা এলাকার বাসিন্দা ওসমান সরকার ওইদিন অন্য একটি ট্রেনে ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরছিলেন হাওড়া অভিমুখে। বেশকিছুদিন সেখানে কাজ করেই বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। বর্তমানে বালেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে সে। এদিকে পুজোর আগে কিছুটা রোজগারের আশায় করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেপে ভিনরাজ্যে কাজে যাবার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন চন্দন রায় নামে তপনের এক যুবক। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার রামপাড়া চাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গাও গঙ্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা সে। বৃহস্পতিবার চন্দন ও তার নিকট আত্মীয় তথা মালদা জেলার বাসিন্দা নৃত্যম রায় একসাথেই রওনা দিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে কাজের জন্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় শালিমার স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বার পরেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন তার রওনা দেওয়ার কথা। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর প্রচার হতেই বাড়ির আত্মীয়-স্বজন বিশেষত চন্দনের স্ত্রী সুচিত্রা রায় কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন চন্দন রায়ের সাথে। কিন্তু তার ফোনের সুইচ অফ পাওয়া যায়।
পরিবারের দাবি, এরপরই তার সফর সঙ্গী নিত্যম রায়ের ফোনে ফোন করা হলে কোন একজন হিন্দিভাষী ফোন তুলে বলেন ফোনের মালিকের মৃত্যু হয়েছে। যে ঘটনা জানবার পরেই কান্নার রোল পড়ে যায় তপনের গাও গঙ্গারামপুর গ্রামে। কাঠের বেড়া দেওয়া দু কামরার ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে আর্থিক হাল ফেরাতেই দুই ভাই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে ছুটে যায় ভিন রাজ্যে। ছোট ভাই ব্যাঙ্গালোরে থাকলেও বড় ভাই চন্দন এবারে মাঠের পাট চাষ করে কয়েক মাসের জন্যই বাইরে যেতে চেয়েছিল। পুজোর আগে কিছু টাকা উপার্জন করে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু আকস্মিক এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ওই পরিবারে।
নিখোঁজ চন্দনের স্ত্রী সুচিত্রা রায় বলেন, ট্রেনে উঠে স্বামীর সাথে কথা হয়েছিল শেষবারের মতো। তারপর থেকে আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার সাথে থাকা আত্মীয়র মৃত্যু হয়েছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা টেলিফোনে তাদের জানিয়েছেন।
একইসাথে হরিরামপুর, কুশমন্ডি এলাকার বেশ কয়েকজন এই ঘটনায় গুরতর জখম হয়েছেন। যারা বালেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, এ পর্যন্ত একজনের মৃত্যু, তিনজনের নিখোঁজ ও ১৪ জনের আহত থাকার খবর এসে পৌঁছেছে। জেলায় কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।