অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ৪ মার্চ: মহিলাদের ওপর হিংসা কি বাড়ছে? বাড়লে কতটা, কী ধরণের? এই ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে গেলে তথ্যের প্রয়োজন। কিন্তু কোথাকার, কোন এবং ক’টি উৎসের তথ্য? প্রচারমাধ্যমের পাঠক বা দর্শকের কাছে সহজে পেশ করতে কীভাবে হবে সেই তথ্যের তুলনামূলক সঙ্কলন?
সংবাদজগতের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে এসব নিয়ে চর্চার প্রয়োজন বেড়েছে। তাই শনিবার প্রেস ক্লাব, কলকাতার সহযোগিতায় গুগুল নিউজ ইনিশিয়েটিভ এবং ‘ডেটা ডায়ালগ’ আয়োজন করল এক শিক্ষাশিবিরের।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গুগুলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার পারুল গোস্বামী আয়োজনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, ’২২-এর ডিসেম্বর থেকে ভারতের বিভিন্ন শহরে বসছে এরকম আলোচনাচক্র। ডেটা ডায়ালগ, ডেটা সোর্সিং, ক্লিনিং, ভেরিফিকেশন— এগুলোর সংজ্ঞার পাশাপাশি সঠিক রূপায়ণের দিকনির্দেশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিসার্চের অ্যাসোসিয়েট প্রোফেসর ডঃ উমাশঙ্কর পাণ্ডে আলোচনায় ভাল সাংবাদিকের আবশ্যিকতা প্রসঙ্গে বলেন, “টু অ্যাক্সেস রাইট কাইন্ড অফ পিপল, অ্যাট দি রাইট টাইম, ইন দি রাইট ওয়ে।“ সেই সঙ্গে ‘পাঠক যা চায়’ এটা যেমন মনে রাখতে হবে, তেমনই সতর্ক থাকতে হবে তথ্যের উৎস, বিশ্লেষণ এবং পরিবেশন নিয়ে। যাতে পরিবেশিত বিষয়টা পাঠককূল তাঁদের নিজের ভাবনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের অধ্যাপক ঘাজালা ইয়াসমিন পাওয়ার পয়েন্ট প্রোজেকশনের মাধ্যমে দেখান, ১০ হাজার বছরের প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে আধুনিক মহাজাগতিক গবেষণা— সবই খবর। কিন্তু বদলে গিয়েছে, আরও বদলে যাচ্ছে এর ঘরানা। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের নথিভূক্ত হিসেব সংখ্যার নিরিখে হরিয়ানার তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশে বেশি। কিন্তু মাথাপিছু হিসাবে ব্যাপারটা উল্টো। তাই ঠিক কীরকম সিদ্ধান্তে আসতে চাই, আগে সেটা বুঝতে হবে।
ঘাজালা বলেন, এই তথ্য বিশ্লেষণ খবরের মান এবং চরিত্র বদলে দেয়। একটি নামী ইংরেজি দৈনিক বিশেষ প্রতিবেদন করল বলিউডে একক গীত (সোলো সঙ) কমে যাচ্ছে। এর ভিত্তি ছিল তথ্য বিশ্লেষণ। সঠিক তথ্য এবং সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারা, কোন গোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা করেছে, এটা কি নমুনা সমীক্ষা (স্যাম্পেল সার্ভে), না ‘প্রোজেক্টেড’— সেটা বুঝে এগোতে হবে। ‘গুগুল ডেটা সেট সার্চ’ বা এরকম সফটওয়্যারের সাহায্য আমরা কিভাবে নিতে পারি, ছোট পর্দায় তা তিনি হাতেকলমে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
গুগুলে যে সব তথ্য এখন আর পাওয়া যায় না তা খুঁজতে ‘ওয়েব্যাক মেশিন’ সফটওয়্যারের হদিশ দেন তিনি। এই প্রসঙ্গে জানান, ‘পাবলিক কজ রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’ (পিসিআরএফ)-এর ২০০৯এর ২২ জানুয়ারি থেকে ’২৩-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৯৬ বিলিয়ন ওয়েব পেজ ওই সফটওয়্যারে রয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজনীতিতে আসার আগে অরবিন্দ কেজরিয়াল তৈরি করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিসিআরএফ।
কীভাবে হিন্দি গান,জাজ এবং কে পপ— এই তিন ঘরানার ‘মিউজিক’ আমাদের প্রভাবিত করছে, ‘গুগুল ট্রেণ্ডস’-এর মাধ্যমে তার লেখচিত্র ঘাজালা পেশ করেন শিক্ষার্থীদের কাছে। বোঝানোর চেষ্টা করেন ‘এক্সেল’, ‘এইচটিএমএল’, ‘সিএসভি’, ‘ওয়ার্ড/টেক্সট ফাইল’ প্রভৃতির কার্যকারিতা।
‘ডেটা লিডস’-এর প্রশিক্ষক অনুষ্কা ডালমিয়া ‘অটোডিটেক্ট টেবল’-এর মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেন নির্বাচন কমিশনের তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাজকর্মের ব্যবচ্ছেদ আমরা কীভাবে করতে পারি। এই প্রসঙ্গে বোঝানোর চেষ্টা করেন ‘ডেটা ক্লিনিং এবং ‘ডেটা ভেরিফিকেশন’-এর কার্যকারিতা।
শিক্ষাশিবিরে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ছিলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকতার পড়ুয়া ও বিশ্লেষক। ছিলেন কিছু সাংবাদিকও। প্রেস ক্লাবের দুই কর্মকর্তা অরিজিৎ দত্ত এবং নিতাই মালাকার ছিলেন মূল ব্যবস্থাপনায়। ছিলেন গুগুল-স্বীকৃত প্রশিক্ষক জয়দীপ দাশগুপ্ত, পুলকেশ ঘোষ।
আলোচনার মূল সুর ছিল, খবরে তথ্যের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। এর জন্য বিষয়ের গভীরে গিয়ে অনুধাবন করাটা আবশ্যিক। আর তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, পরিবেশন— সবেতেই বাড়ছে প্রযুক্তিনির্ভরতা। এ সবে সতর্কতা অবশ্যপ্রয়োজনীয়।