প্রথম দফায় বিমানে রাজ্যে এল ৭ লক্ষ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন, রাখা হয়েছে বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তায়

রাজেন রায়, কলকাতা, ১২ জানুয়ারি: করোনা অতিমারির ভয়াবহ আতঙ্ক কাটাতে শেষ পর্যন্ত রাজ্যে এসে পৌঁছল ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর ঠিক ২.২৬ টায় স্পাইসজেটের বিশেষ কার্গো বিমান দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয়। তারপরই নামানো হয় পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ডের ৬.৮৯ লক্ষ ডোজ। এর মধ্যে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য বরাদ্দ আরও ৩ লক্ষ ডোজ মঙ্গলবার রাতেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা এসআইআই থেকে টিকা কেনার জন্য সেরামের সঙ্গে সরকারিভাবে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার বিকাল থেকেই ট্রাক আসতে শুরু করে সেরামের কার্যালয়ে।

আজ ভোরে দিনের আলো ফোটার আগেই পুণের মঞ্জরিতে সেরামের কার্যালয়ে পুজোর আয়োজন করা হয়। নারকেল ফাটান পুলিশের ডেপুটি কমিশনার নম্রতা পাটিল। তারপর সেরামের কর্মীদের তুমুল হাততালির মধ্যে ভোর ৪ টে ৫৫ মিনিট নাগাদ কোভিশিল্ড বোঝাই তিনটি ট্রাক পুণে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিমানবন্দর পর্যন্ত নিরাপত্তা দেয় পুলিশ। ভোর ৫ টা ৩০ মিনিট নাগাদ থেকে বিমানবন্দরে শুরু হয় টিকা নামানোর কাজ। সেখানে মোতায়েন ছিলেন সিআইএসএফ জওয়ানরা। এদিন সকাল ১০টা নাগাদ প্রথম বিমানটি দিল্লির পথে উড়ে যায়। দ্বিতীয় বিমান পুণে থেকে বেলা ১২টার নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে উড়ে যায়। যা এসে পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দরে।

এরপর বিমান থেকে টিকা নামিয়ে তা তোলা হয় তিনটি গাড়িতে। ২টো ২৫ মিনিটে কার্গো গেট থেকে সেই টিকা নিয়ে বার হয় ভ্যাকসিনের গাড়ি। পাইলট কারের মাধ্যমে তিনটি ট্রাক সেন্ট্রাল স্টোরে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন কলকাতায় যে বাক্স করে টিকা এসে পৌঁছেছে সেই প্রতিটি বাক্সের ওজন ৩২ কেজি। যে ট্রাকগুলি করে বিমানবন্দর থেকে সেন্ট্রাল স্টোরে ভ্যাকসিন নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের ভেতরকার তাপমাত্রা মাইনাস ২৫ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছিল। কলকাতা এবং জেলা মিলিয়ে রাজ্যের ৯৪১টি কেন্দ্রে পাঠানো হবে এই ভ্যাকসিন।

জানা গিয়েছে, সেই ইনসুলেটেড ভ্যানে করে প্রথম ভাগে কিছু টিকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাগবাজারের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরে, যা কলকাতায় এবং জেলায় পাঠানো হবে। বিমানবন্দর থেকে বাকি টিকা পাঠানো হয় হেস্টিংসে কেন্দ্রের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল স্টোর্স ডিপোতে। সেখান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে টিকা পাঠানো হবে।

বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২৮ টি গাড়ির কনভয় নিয়ে পুলিশ গ্রিন করিডর করে গাড়িগুলি নিয়ে যায় নির্দিষ্ট কোল্ড স্টোরেজে। প্রতিটি কোল্ড চেনে বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। সর্বোচ্চ স্তরে সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ টিকা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য প্রশাসন।

এদিন আবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব দুপুর ৩টে থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে সব জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের সঙ্গে টিকা নিয়ে বৈঠক করেছেন। কোন কোন জেলায় কিভাবে পাঠানো হবে তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছে।

১৬ তারিখ থেকে দেশজুড়ে শুরু হতে চলেছে করোনা টিকাকরণ। তার বেশ কয়েকদিন আগেই কলকাতায় এসে পৌঁছল প্রতিষেধক। তাতে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে বলে মত স্বাস্থ্য মহলের। এদিন টিকা এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্যুইট করে রাজ্যবাসীকে এই বার্তা দিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথমে চিকিৎসক এবং সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে দেওয়া হবে এই টিকা। তার পরে টিকা দেওয়া হবে পুলিশ, সাফাই কর্মী সহ প্রথম সারির যোদ্ধাদের। তারপর ধাপে ধাপে সাধারণ মানুষ পাবেন ভ্যাকসিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *