TMC, Bankura, বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বাঁকুড়ায় অরূপ খাঁ ও মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে গুরুত্ব শাসক দলের

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৪ এপ্রিল: দীর্ঘদিন কোণঠাসা থাকার পর দলে ফের গুরুত্ব পেতে চলেছে ওন্দার প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ খাঁ ও রাইপুরের বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, এমনটাই মনে করছেন জেলা রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল। রাজ্য পঞ্চায়েত অরূপ খাঁকে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মেন্টর ও মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে কো- মেন্টর হিসাবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। এই দু’জনই জেলা রাজনীতিতে অতিপরিচিত মুখ। এই দুই নেতার ওপর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যেই সেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

অরূপ খাঁ ওন্দা বিধানসভা কেন্দ্রে গত ২০১১ ও ২০১৬ নির্বাচনে শাসক দলের বিধায়ক হয়েছিলেন। তিনি দলের জেলা সভাপতিও ছিলেন। গত ২০২১- এর নির্বাচনে ওন্দা কেন্দ্রে বিজেপির অমর নাথ শাকার কাছে হেরে যান। এক সময় অরূপ খাঁ ছিলেন ওন্দা বিধানসভা এলাকার সর্বেসর্বা। এনিয়ে ওন্দায় বিক্ষোভ শুরু হয় শাসক দলে। ওন্দায় দলের তৎকালীন ব্লক সভাপতি উত্তম বীটের সঙ্গে ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিরূপ খাঁয়ের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দলের একাংশের অভিযোগ ছিল, অরূপবাবু তার ভাইপো অভিরূপকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করে নিজে কর্তৃত্ব করছেন। বিভিন্ন নির্বাচনে অর্থের বিনিময়ে দলীয় টিকিট দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। দলের সুপ্রিমোর কানে যায় সেই অসন্তোষের খবর।

অন্যদিকে বাঁকুড়ায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কালীঘাটে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে সেসব প্রসঙ্গ ওঠে। সেখানে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খান অরূপ খাঁ সহ জেলার একাধিক শীর্ষ নেতা। এমনকি পদ থেকে সরানো হয় দলের জেলা যুব সভাপতিকে। নেত্রী বৈঠকে দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনার তো জেলা সভাপতি হওয়ার যোগ্যতাই নেই। এত দিনেও এলাকায় ব্লক কমিটি গড়তে পারলেন না।” তখনই বোঝা গিয়েছিল অরূপ খাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। তারপর থেকেই অরূপ খাঁ দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু গত ২০২১ সালে জেলার লালদুর্গ রাইপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। অন্যদিকে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি থাকাকালীন দলনেত্রী তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠেন। বাঁকুড়ায় এক প্রশাসনিক সভায় কড়া ভাষায় তিনি সেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সম্ভবতঃ রাজ্যের অন্য কোনো জেলা সভাধিপতিকে তিনি এরকম কড়া ভাষা বলেননি। তিনি বলেন যে, “টাকা তো নিয়েছেন, কী করছেন? সব থেকে বেশি টেন্ডার কোন দপ্তর থেকে হয়। টেন্ডার কিভাবে হচ্ছে। সরকারি কাজে টেন্ডার পড়ে রয়েছে কেন? সবাই বলছে টেন্ডারে স্বজন পোষন চলছে।”

সেই সময় সভাধিপতি জানান, যে জেলা শাসকের কাছে বহু ফাইল আটকে থাকায় উন্নয়নের কাজ করা যাচ্ছে না। এতে প্রচন্ড রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ডিমএম ও এসপি’দের বিরুদ্ধে কুটকচালি করলে সব ভেঙে দেব।” এই প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর কানে সেই সময় খবর যায় যে তৎকালীন জেলা শাসক কে রাধিকা আইয়ারকে এড়িয়ে জেলার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করছেন সভাধিপতি। এমনকি কাকতালীয়ভাবে সেই সময় জেলা শাসক স্বজন পোষন করছেন বলে অভিযোগ তুলে একটা লিফলেট প্রচারিত হয়। অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে সভাধিপতির দিকে। মুখ্যমন্ত্রী সেই ঘটনার তদন্ত ভার জেলা শাসককে দেন। তখন থেকে এক ঘরে হয়ে পড়েন মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু।

রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের খবর, দলনেত্রী এই দুই নেতাকে সোজাসুজি সংগঠনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে রাজি নয়। আবার ২০২৬- এর নির্বাচনের কথা ভেবে এই দুই নেতাকে দূরে সরিয়ে রাখাও ঠিক নয় বলে মনে করছেন। আগামী নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা। তাই এই দুই নেতাকে কাজে লাগাতে চায় দল। তার ওপর অতিদ্রুত দলের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হবে।জেলার দলীয় সংগঠনে এই দুই নেতা কোনো দায়িত্ব না পেয়ে যাতে বিক্ষুব্ধ না হন সে জন্য তড়িঘড়ি তাদের মেন্টর ও কো- মেন্টর করা হল।

এ প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, জেলা সংগঠনে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োগ করা সম্ভব নয়, অথচ তাদের সঙ্গে নিয়ে চলার ভাবনা থেকেই তাদের জেলা পরিষদের মেন্টর ও কো- মেন্টর করার পরিকল্পনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *