আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৫ এপ্রিল: রাতের অন্ধকারে একের পর মৃতদেহ বাঁকুড়া শহরের জনবসতিপূর্ণ শ্মশানে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ। এলাকার মানুষের অভিযোগ, করোনা আক্রান্তদের গোপনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে উত্তাল বাঁকুড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। মৃতদেহ সৎকারে বাধা এলাকাবাসীর। বিক্ষোভ এলাকার দুই কাউন্সিলারের বাড়িতেও। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ গভীর রাতে।
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের ফিভার ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে এবার এলাকার মানুষের কাছে বড়সড় বাধার মুখে পড়তে হল বাঁকুড়া পুরসভা, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে। বাঁকুড়া শহরের লোকালয়ের মধ্যে থাকা লক্ষ্যাতড়া মহাশ্মশানে রাতের অন্ধকারে একের পর এক করোনা সন্দেহজনক আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকার করা চলবে না এই দাবি তুলে রাতভর বিক্ষোভে সামিল হন এলাকার মানুষ। বিক্ষোভ দেখানো হয় স্থানীয় দুই কাউন্সিলারের বাড়িতেও। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয়। এলাকা ক্ষোভে ফুঁসছে।
সোমবার রাতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার বাঁকাদহ এলাকার ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের ফিভার ওয়ার্ডে। ভর্তির ঘন্টা দুই পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া পৌরসভা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সৎকারের জন্য সরাসরি নিয়ে যায় বাঁকুড়া শহরের জনবসতিপূর্ণ লক্ষ্যাতড়া মহাশ্মশানে। মৃতদেহ সৎকারের পর শ্মশান ও শববাহী গাড়ি স্যানিটাইজ করার জন্য শ্মশানে পৌঁছায় দমকলের একটি ইঞ্জিনও।
রাতের অন্ধকারে করোনা সন্দেহজনক আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকারের চেষ্টা চলছে জানতে পেরে লালবাজার ও লক্ষ্যাতড়া শ্মশান এলাকার বাসিন্দারা প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষোভ দেখানো হয় লক্ষ্যাতড়া শ্মশানেও। স্থানীয়দের দাবি, গত দু দিন ধরে হাসপাতালের ফিভার ওয়ার্ডে মৃতদের লালারসের নমুনা পরীক্ষার আগেই রাতের অন্ধকারে লোকালয়ের মধ্যে থাকা লক্ষ্যাতড়া শ্মশানে নিয়ে এসে সৎকার করে দিচ্ছে বাঁকুড়া পৌরসভা ও পুলিশ প্রশাসন। এই ভাবে চলতে থাকলে এলাকায় করোনার মতো মারণ অসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মৃতদেহগুলি সৎকারের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য ও ডেথ সার্টিফিকেটও দিতে পারেনি শ্মশানে নিযুক্ত বাঁকুড়া পৌরসভার কর্মীরা। তাঁদের দাবি প্রবল চাপের মুখে তাঁরা এই মৃতদেহগুলি সৎকারে বাধ্য হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার দাবিতে বাঁকুড়া পৌরসভার স্থানীয় চার ও কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। পরে চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এলাকার মানুষের সঙ্গে সামিল হয়ে মৃতদেহ সৎকারের বিরোধীতায় নেমে পড়েন।
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার খবর পাওয়ার পরই বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। প্রথমে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু কোনোভাবেই বিক্ষোভ সামাল দিতে না পেরে গভীর রাতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয় ।