“২২ মার্চ ছিল আমাদের প্রথম ড্রিল। আগামীকাল ৫ এপ্রিল রবিবার আমাদের দ্বিতীয় ড্রিল। আমাদের সবার। বাড়ির সবার। রাত্রি ন টায়, ন’মিনিটের ড্রিল বা প্যারেড। যুদ্ধের সময় সেনাপতির আদেশ মানতে হবে। ডিসিপ্লিন রাখতে হবে।”
আমাদের ভারত, ৪ এপ্রিল: সেনাবাহিনীতে একজন সৈনিক মনে কর মোট ২০ বছর চাকরি করেছে। ২০০১ সালে সে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়েছিল। ২০২০ সালে রিটায়ার করে গেল। এই ২০ বছরে সে কতবার যুদ্ধ করেছে? একবারও নয়। কারণ এই ২০ বছরে আমাদের দেশের সঙ্গে অন্য কোনও দেশের যুদ্ধ হয়নি। তবু কাশ্মীর আছে বলে যুদ্ধের মত পরিস্থিতিতে হয়ত সে ৬ মাস, ১ বছর বা ২ বছর সেখানে ডিউটি করেছে। ভারতের ১৪ লক্ষ সেনা এবং ১০ লক্ষ আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে অনেকেরই কাশ্মীরে একবারও পোস্টিং পড়ে না।
তাহলে ওই সৈন্যরা, যাদের যুদ্ধ করার সুযোগ আসে না, তারা পুরো কর্ম জীবনটা কী করে? তাদের অনেক কিছু করতে হয়। একটা জিনিস সবাইকে করতে হয়, বাধ্যতামূলক ভাবে করতে হয়। সেটা কী? প্যারেড ও ড্রিল। কেন করতে হয় ভাই? একটাই কারণ। খুব জোর দিয়ে বলছি, একটাই কারণ। যুদ্ধের প্রস্তুতি।
পৃথিবীতে এমন কোনও সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনী আছে, যাদের ড্রিল বা প্যারেড করতে হয় না? নেই।
ভারত এবং গোটা বিশ্ব এখন যে সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, তার মোকাবিলা করাটা কি যুদ্ধের মত নয়? এই যুদ্ধ কি দেশের নিয়মিত সেনাবাহিনী লড়তে পারবে? না। তাহলে কে লড়তে পারবে? জনসাধারণ। আমি, তুমি, আমরা সবাই। এটা কী? লড়াই। লড়াই মানে যুদ্ধ। এক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রকারটা ভিন্ন। তবু যুদ্ধ। সুতরাং আমরা, সাধারণ মানুষকে এখন সৈন্যের ভূমিকা পালন করতে হবে। হচ্ছে। তাহলে আমাদেরও ড্রিল বা প্যারেড করতে হবে–ডিসিপ্লিন ও একতা আনার জন্য এবং সামূহিক সংকল্প শক্তি বৃদ্ধির জন্য। এ সবগুলোই যুদ্ধের জন্য খুবই দরকার।
একটু ভেবে দেখো তো, আমাদের বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকেও এই যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে কিনা? বুঝিয়ে বলতে হবে? তাদের ঘরের ভিতরে আটকে থাকতে হচ্ছে। খেলার মাঠে যেতে পারছে না। বন্ধুর বাড়ি যেতে পারছে না। আইসক্রিম, লজেন্স, মুখরোচক জিনিস খেতে পাচ্ছে না। এও তো একরকমের যুদ্ধ। অর্থাৎ বড়, বুড়ো, বালক, শিশু, সবাইকে এই যুদ্ধে নামতে হচ্ছে। আর এই যুদ্ধ যে কতদিন চলবে, তাও বলা যাচ্ছে না।
এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি লাগবে না? সমস্ত সৈন্যদের জন্য লাগবে না? সমস্ত সৈন্য মানে সম্পূর্ণ সমাজ। সেই সম্পূর্ণ বিরাট সমাজকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে ড্রিল ও প্যারেড করাতে হবে। কে করাবে? কিভাবে করাবে? তার জন্য যতবড় হিম্মতওয়ালা ছাতি চাই, ততবড়ই উদ্ভাবনশীল মস্তিষ্ক চাই। ১৩৮ কোটি মানুষকে দিয়ে স্বেচ্ছায় কিছু করানোর কথা চিন্তা করাটাও কত বড় ব্যাপার! এর জন্য লাগে বিরাট আত্মবিশ্বাস, গভীর দেশভক্তি, দেশবাসীর সঙ্গে এক অকল্পনীয় একাত্মতাবোধ এবং সর্বোপরি বিরাট সাহস। এ তো যুদ্ধ! যুদ্ধে জয় বা পরাজয় যে কোনোটা হতে পারে। সেরকম পরিস্থিতিতে একজন যোদ্ধা, একজন ক্ষত্রিয় যুদ্ধে যাবে না ঘরে বসে থাকবে? ভারতের ক্ষাত্রধর্ম কী শিখিয়েছে?
মোদীজী’কে তো আমরা দেশের রাজা করেছি। রাজা মানেই তো ক্ষত্রিয়। তাঁকে তো ক্ষাত্রধর্ম পালন করতে হবে। যুদ্ধের আহ্বান আসলে, দেশ জাতির উপর আক্রমণ হলে, ক্ষত্রিয় রাজার কর্তব্য কী? নরেন্দ্র মোদী কি ঠিক সেই কাজটাই করছেন না? জয় পরাজয়ের কথা না ভেবে! গীতার সেই চিরন্তন অমোঘ নির্দেশকে স্মরণে রেখে! কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
আজ এই করোনা যুদ্ধে মোদীজী আমাদের সেনাপতি, আমরা সেই সেনাবাহিনীর সৈন্য। ২২ মার্চ ছিল আমাদের প্রথম ড্রিল। আগামীকাল ৫ এপ্রিল রবিবার আমাদের দ্বিতীয় ড্রিল। আমাদের সবার। বাড়ির সবার। রাত্রি ন টায়, ন’মিনিটের ড্রিল বা প্যারেড। যুদ্ধের সময় সেনাপতির আদেশ মানতে হবে। ডিসিপ্লিন রাখতে হবে। প্রশ্ন করার সময় পরে অনেক পাব। বাড়ির সবাইকে প্রস্তুত কর। পাড়ার সবাইকে বল, ফোনে সব আত্মীয় বন্ধুদের এই যুদ্ধের কথা, সেনাপতির এই আদেশের কথা, এই সামূহিক ড্রিলের কথা জানাও। নিঃসংকোচে জানাও, দৃঢ়তার সঙ্গে জানাও।
ভারতমাতা কি জয়।। মহান হিন্দুধর্ম কি জয়।।
(লেখক কট্টর হিন্দু নেতা, তপন কুমার ঘোষ)