রাজেন রায়, কলকাতা, ২৯ জুলাই: পরিবারতন্ত্রের ঘুণপোকা কি এবার থাবা বসাতে চলেছে শাসক দল তৃণমূলের অন্দরেও? তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের প্রায় সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বেশির ভাগ ক্ষমতার অন্তর্ভুক্তিতে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দলের অন্দরে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবার আসন থেকে জিতলেও দলে প্রভাব কিছুটা কমে যাওয়ায় সামান্য পিছনের সারিতে চলে গিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু ২০২০ সালে সাংগঠনিক রদবদলের দেখা গেল, ক্ষমতার অলিন্দ যেন পুরোটাই অভিষেক-ময়। স্বভাবতই এক সময়ের মুকুল রায়ের পর এবার শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক নেতাদের অনুগামীরা এখনও সরাসরি না হলেও গোপনে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ একজোট হচ্ছেন।
একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভা থেকেই সাংগঠনিক রদবদলের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রাজ্য এবং জেলাস্তরে যে পরিবর্তন আনলেন, তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের অন্যতম সেনাপতি হতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু জেলার জেলা সভাপতি পরিবর্তন করেছেন তৃণমূল নেত্রী। গঠিত করেছেন চেয়ারম্যান পদ। সেদিক থেকে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয়েছে। সংগঠনকে সাজাতে নতুন এবং পুরনোদের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, দলে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছিল। একাধিক জেলার দায়িত্ব গিয়েছি শুভেন্দুবাবুর কাছে। যার ফলে তাকে রাজ্য সভাপতি করার জন্য দাবি জানানো হচ্ছিল। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ব্যাপারে নানা আওয়াজ তুলেছিলেন শুভেন্দুবাবুর অনুগামীরা। যদি তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে না নিয়ে আসা হয়, তাহলে তিনি কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলেও মনে করা হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দলের রাশ দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে কোর কমিটির সদস্য করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। অনেকে বলছেন, এর ফলে শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস করে দেওয়া হল।সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে গুরুত্ব বৃদ্ধি পেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুভেন্দুবাবু যাতে অভিষেকের থেকে বড় না হয়ে ওঠেন, তার জন্যই এই নিখুঁত পরিকল্পনা বলে মত রাজনৈতিক মহলের। শুধু তাই নয়, রাশ থাকল কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের হাতেই। অন্যান্য নেতারা যতই বড় হন না কেন, অভিষেককে তাদের মেনে চলতে হবেই। এই পরিস্থিতিতে মুকুল রায়ের মত আবার কেউ বিদ্রোহ করেন কি না, সেটা দেখার অপেক্ষাতেই সমগ্র রাজনৈতিক মহল।

