বাগিচা পরিকল্পনা ও চারা তৈরির চাবিকাঠি খুঁজতে বিসিকেভিতে

মিলন খামারিয়ার প্রতিবেদন
আমাদের ভারত, ১১ ফেব্রুয়ারী: কথায় বলে, ‘খেলে ফল, বাড়বে বল’। তাই ফলের উপকারিতা সর্বজনবিদিত। সেই ফল বাগিচা তৈরি সম্পর্কে জানতে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফল-গবেষণা’ কেন্দ্রে এসেছিলেন প্রায় পঞ্চাশজন কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ। সর্ব ভারতীয় সমন্বিত ফল গবেষণা প্রকল্পের (ICAR-AICRP on Fruits) খামার থেকে নতুন প্রযুক্তি শিখতে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর মন্ডৌরীর কেন্দ্রে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এখানেই আয়োজিত হয় একদিনের ‘কৃষক প্রশিক্ষণ শিবির’।

ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর তথা বিশিষ্ট উদ্যানবিদ ড. কল্যাণ চক্রবর্তী সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা দিয়ে প্রশিক্ষণ-প্রয়োজনীয়তার সুর বেঁধে দেন, “মন্বন্তরে মরিনি আমরা/মারি নিয়ে ঘর করি।” কেন এই আয়োজন, বলতে গিয়ে বাংলার চলতি কথার অবতারণা করেন, “নিম নিশিন্দা যেথা/মানুষ মরে না সেথা”। বলেন, “বারো মাসে বারো ফল/না খেলে যায় রসাতল।”

কোভিড পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষ বেঁচে গিয়েছে, তার নানান ভেষজ, বারোমাসি ফল ও দেশীয় শাকসব্জির ব্যবহারের দৌলতে। করোনা পরিস্থিতিতেও এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা অনলাইনে এবং সতর্কতা মেনে সরাসরি কৃষকের জমিতে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন। ফলচাষে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় বাগান রচনার বিজ্ঞানসম্মত ট্রেনিং প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই বাংলার নানান অঞ্চল থেকে কৃষকেরা এসেছিলেন সেদিন।

কার্যক্রমের প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিকাশরঞ্জন সিংহ মহাপাত্র। তিনি বলেন, “আগামী দিনে জেলা ভিত্তিক এইরকম প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হবে। কৃষকের কাছে আমরা আরও পৌঁছে যেতে চাই। সেবিষয়ে ব্যবস্থা করবেন আমাদের বিজ্ঞানীরা।”

এই কার্যক্রমে প্রবুদ্ধ মানুষদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গবেষণা অধিকর্তা অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সাহু, সম্প্রসারণ অধিকর্তা অধ্যাপক উমেশ থাপা, স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠনের অধ্যক্ষ অধ্যাপক প্রণব কুমার হাজরা, উদ্যানপালন অনুষদের অধ্যক্ষ অধ্যাপক পল্লব দত্ত ও প্রকল্প আধিকারিক অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র এবং অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউড়ি।

অধ্যাপক মিশ্র অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই গবেষণা কেন্দ্রে আম, লিচু, কলা, পেয়ারা ও কাঁঠালের মতো পাঁচটি ফলের উপর নানান বিষয়ে গবেষণার কাজ চলছে। এই জ্ঞানভান্ডার কৃষকদের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়। কৃষকদের মধ্যে থেকে সবসময় একটি দাবি উঠে আসে, লাভজনকভাবে ফলচাষের কৃৎকৌশল যেন তাদের কাছে পৌঁছানো হয়। তাতে সাড়া দিয়ে প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা রাজ্যের নানান স্থানে ছুটে যান। প্রশিক্ষণের নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তীর মতো বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী। আমরা আশাকরি আমাদের গবেষণার সুফল রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে বাংলায় ফল চাষের আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।”

অধ্যাপক চক্রবর্তী, অধ্যাপক মিশ্র ছাড়াও প্রশিক্ষণ দেন ড. সঞ্জিত দেবনাথ। কৃষি সম্প্রসারণ বিষয়ে বলেন অধ্যাপক অমিতাভ বিশ্বাস। যোগদানকারীদের হাতে কলমে চারা তৈরির কলাকৌশল শেখানো হয়। আমের জোরকলম, পেয়ারার গুটিকলম, নানান গাছের কাটাকলম বা কাটিং। মাঠ প্রদর্শন করে গাছের সৌধ নির্মাণ বা প্ল্যান্ট আর্কিটেকচার বিষয়ে এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়েও ড. চক্রবর্তী কৃষকদের অবহিত করান। প্রত্যেককে দু’টি উন্নত জাতের ফলগাছের চারা, কিছুটা সার এবং অন্যান্য সামগ্রী বিনামূল্যে দেওয়া হয়। উপস্থিত কৃষকেরাও নানান বিষয়ে মত বিনিময় করেন। পরিশেষে সকলকে অভিজ্ঞান পত্র দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *