প্রশান্তের গোপন রিপোর্টের প্রভাব তৃণমূলে! রদবদলে সামনের সারিতে মহুয়া-লক্ষ্মী

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৫ জুলাই: দলে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেল না ঘটানোর জন্য রাজনীতিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে অনেক রাজনৈতিক দল। কিন্তু তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের যুব জাগরণের প্রভাব পড়ল সাংগঠনিক রদবদলে। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রশান্ত যে যুব জাগরণের প্রচার চালাতেন, তা এবার তৃণমূলের একুশের লড়াই এর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠল। সেই কারণেই এবার সামনের সারিতে উঠে এল মহুয়া মৈত্র ও লক্ষ্মীরতন শুক্লের নাম। যদিও সংগঠনের নিরিখে এই দুই তৃণমূল নেতা অপেক্ষাকৃত নতুন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বৃহস্পতিবারের এই সাংগঠনিক রদবদল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভায় দলের ড্যামেজ কন্ট্রোলে ঝকমকে তারুণ্যের মুখে ভরসা রাখতে চেয়েছে তৃণমূল। এবার দলের এই রদবদলেও পিকে-র স্ট্র্যাটেজি রয়েছে বলে মত দলীয় নেতৃত্বের।

ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দলীয় নেতৃত্ব এর কার্যকলাপ নিয়ে তৈরি করা গোপন ফাইল জমা দিয়েছেন। সেখানে প্রশান্ত আলাদা আলাদা ভাবে নেতাদের জনগনের কাছে গ্রহণ যোগ্যতার কথাও তুলে ধরেন। টেক স্যাভি যুগে আধুনিক তরুণ নেতারা উঠে না এলে সমাজের যুব সম্প্রদায়ের কাছে তারা গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন। তারই প্রতিফলন দেখা গেল ২০২১-এর আগে তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে। ৩-৪ মাস আগেই সেই রিপোর্ট জমা পড়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সেই গোপন রিপোর্টের ভিত্তিতেই সংগঠনিক রদবদল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার তথা দলের বিধায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে জেলার গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাওড়ায় জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে। তার বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ মুখ ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লাকে। সম্প্রতি, হাওড়ায় দুর্নীতির প্রসঙ্গে দলের তিন জনকে শোকজ করেছিলেন প্রাক্তন সভাপতি অরূপ রায়। সে সময়ে হাওড়া জেলার পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ মধ্যমের সামনে বলে ছিলেন, ‘চুনোপুঁটিদের ধরে লাভ নেই রাঘববোয়ালদের ধরতে হবে।’ তারপরেই দলের অন্দরেই রাজীবকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় সংঘাতের আবহ। কিন্তু রাজীবের সেদিনকার কথা কতটা তাৎপর্যবহ ছিল, তা তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলের পর পরিষ্কার হয়ে গেল।

অন্যদিকে, নদিয়ায় জেলা সভাপতি করা হয়েছে সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। নদীয়ার জেলা সভাপতি, গৌরীশংকর দত্তকে সরানো হয়। সম্প্রতি মহুয়া মৈত্র সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁর এলাকার বিভিন্ন কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছিলেন। কোনও দলীয় বিরোধের কথা মুখে না বললেও কাজের নিরিখে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।পাশাপাশি গত লোকসভা নির্বাচনে নদিয়ার ফলাফল ভালো ছিল না। সে কারণেই গৌরীশংকর দত্তকে সরিয়ে মহুয়া মৈত্র’কে সভাপতি পদ দেওয়া হয়। দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতেই এই মাস্টার স্ট্রোক বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *