“অনুসরণ, কিন্তু অনুকরণ নয়“, হবু গবেষকদের তত্বতালাশ বিশেষজ্ঞের

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১২ ডিসেম্বর: অনুসরণ, কিন্তু অনুকরণ নয়। সোমবার হবু গবেষকদের শিক্ষা শিবিরে এই আপ্তবাক্য তাঁদের ভাবনার সঙ্গে একাত্ম করে নেওয়ার আর্জি জানালেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ প্রণাম ধর।

‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এবং ‘সেন্টার ফর স্কিল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ’— এই দুই সংস্থার অধিকর্তা প্রণামবাবু। এদিন বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির (বিএসএইউই) উপাচার্য ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে শিক্ষাশিবির চলছে, তার পঞ্চম দিন প্রণামবাবুর আলোচনার শিরোনাম ছিল ‘রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন এথিকস’।

তিনি বলেন, “ইউজিসি যে কোনও গবেষণাপত্রে নকল থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করেছে। অন্যের লেখা থেকে উক্তি/তথ্য নিলে সাইটেশন অর্থাৎ স্বীকৃতিপর্বে তার যথাযথ স্বীকৃতি বা মান্যতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গবেষণা, ওয়ার্কশপ এবং পিএইচডি-র ক্ষেত্রে সাইটেশনে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, মিনেসোটা লাইব্রেরি অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতির সূত্র মানতে হবে।” শিবিরে হাতেকলমে সেগুলোর প্রয়োগ দেখান প্রণামবাবু।

এই সঙ্গে তিনি হবু গবেষকদের বোঝান অন্যের গবেষণাপত্রের তথ্য বা পর্যবেক্ষণের সহায়তা নিয়েও সততার সঙ্গে কিছু সতর্কতা নিলে ‘প্লেজিয়ারিজম’ (লেখা চুরি)-এর অপবাদ থেকে বাঁচতে পারবেন। সেই সব পথের হদিশও দেন তিনি। এই সঙ্গে বলেন, তৎক্ষণাৎ চুরি ধরার জন্য এখন অনেক সফটওয়্যার এসে গিয়েছে। তাই সাধু সাবধান।

সরকারি ৪৩টি বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রণামবাবু এদিনের আলোচনায় বলেন, “থিসিস জমা দেওয়ার আগে দুটি করে পাবলিকেশন বাধ্যতামূলক। ভালোভাবে এই কাজ করতে গেলে সময় এবং পরিশ্রম দরকার। অনেকে এই কাজটা সহজে করার জন্য টাকার বিনিময়ে এমন জার্নালে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন যেগুলো অসাধু (প্রিডেটরি)। সহজলভ্য এই প্রবণতা বন্ধ করতে ২০১৭ সালে ইউজিসি একটি সমীক্ষা করায়। তাতে দেখা যায় এদেশে এরকম ভুঁইফোঁর জার্নাল রয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ। গবেষণার গুনগত মান না খতিয়ে সেগুলো লেখা ছাপায়। বিষয়টির ওপর নজর রাখার লক্ষ্যে ইউজিসি তৈরি করে ’কনসোর্টিয়াম ফর অ্যাকাডেমিক রিসার্চ এথিকস’ (কেয়ার)। এর দায়িত্ব দেওয়া হয় পুণের সাবিত্রীভাই ফুলে ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ডঃ ভূষণ পট্টনায়ককে। এই কমিটির কড়াকড়িতে এরকম পাবলিকেশনের সংখ্যা এক লক্ষ থেকে এক লপ্তে নেমে যায় ৩৫ হাজারে। ইউজিসি জানিয়ে দিয়েছে, ‘কেয়ার’-স্বীকৃত পাবলিকেশনে যেন থিসিস জমা দেওয়ার আগের লেখা দেন হবু গবেষকরা। এ সব প্রাক-থিসিস গবেষণা কোথায় কোথায় দেওয়া বিধেয়, শিবিরে তা ব্যাখ্যা করেন প্রণামবাবু।

আলোচনায় প্রণামবাবু বলেন, “গবেষণায় যেসব মূল গবেষনার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, সেখানে লেখকের সঙ্গে তাঁর সহকারির নাম উল্লেখ করতে হবে। এটাই এথিক্স। অর্থাৎ সহলেখককে মান্যতা দিতে হবে। নমুনা সংগ্রহের জন্য গবেষক যাঁদের বা যে শ্রেণীর সাহায্য নিচ্ছেন, লক্ষ্য রাখতে হবে তাঁদের কাছে যেন গবেষণার সুফল পৌঁছোয়। উদাহরণ হিসাবে প্রণামবাবু বলেন, “ধরা যাক দুর্গম কোনও প্রান্তের জনগোষ্ঠীর ওপর কেউ গবেষণা করে কোনও বড় স্বীকৃতি পেলেন। অনেক সময়ই দেখা যায়, এই স্বীকৃতির ছিঁটেফোঁটা ওই জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও কাজে এল না। নমুনাগ্রহীতাদের কাছে যাতে গবেষণার সুফল পৌঁছোয়, গোড়া থেকে সেটি গবেষকের মাথায় রাখতে হবে। এটাও একটা এথিক্স।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *