“চাকরি করতে হলে মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে চলতে হবে, না হলে অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হবে,” হুমকি বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়ের

সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ১২ মার্চ: এই রাজ্যে চাকরি করতে হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের কথা শুনে চলতে হবে। তা না হলে গুরাট বা উত্তরপ্রদেশে চলে যেতে হবে। স্কুলের মধ্যে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে শাসালেন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়।

ধর্মঘটের জেরে শুক্রবার স্কুল বন্ধ ছিল। পঠন পাঠন হয়নি। মিড ডে মিল রান্না হয়নি। তাতে শামিল হয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার কোনিয়ারা যাদবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফলে ওইদিন স্কুল ছিল বন্ধ। পড়াশোনায় ক্ষতি হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। সেই ঘাটতি মেটাতে পড়ুয়াদের অনুমতি নিয়েই রবিবার স্কুল খোলা রেখে ক্লাস করালেন শিক্ষকরা। আর এদিনের মিড-ডে মিলের খরচও শিক্ষকরাই জোগালেন। সকলে মিলে চাঁদা তুলে রবিবার ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ালেন। শিক্ষকদের এই ভূমিকায় খুশি পড়ুয়া ও অভিভাবকরা।

রবিবার স্কুল খোলার খবর পেয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েন তৃণমূলের নেতা কর্মী সহ বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায় ও তাঁর দলবল। স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকদের উপর চরাও হন। রীতিমত প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন। কেন শুক্রবার বন্ধ রাখা হয়েছিল স্কুল? কার অনুমতি নিয়ে রবিবার স্কুল খোলা রেখেছেন? ধমকানো হয় মিড-ডে মিলের কর্মীদের।

স্কুলে ঢুকে মিড-ডে মিলের কর্মীদের উদ্দেশে গোপা রায় বলেন, আপনাদের কে চাকরি দিয়েছে? প্রধান শিক্ষক দেয়নি, দিয়েছেন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর প্রধান শিক্ষকের টেবিল চাপরে গোপা রায় বলেন, কার অনুমতি নিয়ে রবিবার স্কুল খুলেছেন? এক দিকে রাজ্যের বিরোধিতা করবেন আর এক দিকে ভালো হওয়ার চেষ্টা। এই সব চলবে না। এই রাজ্যে চাকরি করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনে চলতে হবে। তা না হলে গুরাট বা উত্তরপ্রদেশ চলে যেতে হবে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার জানিয়েছেন, আমরা আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলাম শুক্রবার ডিএ ধর্মঘটে তাঁরা শামিল হবেন। তাই ওইদিন স্কুল বন্ধ থাকবে। কিন্তু এই যে একটা দিন পড়াশোনায় ঘাটতি হয়ে গেল, তা পুষিয়ে দিতেই রবিবার ক্লাস করানোর কথা। এরপর পড়ুয়াদের অনুমতি নিয়ে রবিবার স্কুল খুললে কি তারা পড়াশোনা করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে পড়ুয়ারা জানায়, তাদের আপত্তি নেই। সেই মতো স্কুল খোলা রেখে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান শিক্ষকরা। সেই সময় স্কুলের মধ্যে ঢুকে কমিটির লোকজন, ও বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায় ও তাঁর দলবল এসে প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ করে৷ প্রধান শিক্ষককে ধমকায়৷ ধমকানো হয় মিড-ডে মিলের রাঁধুনিদের।

গোপা রায় প্রধান শিক্ষকের সামনে ডেকে এনে মিড ডে মিলের কর্মীদের বলেন, আপনাদের চাকরি প্রধান শিক্ষক দেয়নি দিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর প্রধান শিক্ষকের টেবিল চাপরে বলেন, কার অনুমতি নিয়ে রবিবার স্কুল খুলেছে? স্কুলের মধ্যে ঢুকে কমিটির লোক, স্থানীয় বাসিন্দা ও বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায় এসে প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ করে৷

বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, এটাই তৃণমূলের আসল রূপ। ধমকানো চমকানো এটাই কালচার। একজন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সে কি না স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে শাসাচ্ছেন। আমরা কোন রাজ্যে বাস করছি? তিনি কিনা বলছেন এই রাজ্যে চাকরি করতে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে চলতে হবে। ভাবতেও অবাক লাগে। এই চোরের দল রাজ্যে আর বেশি দিন নেই। ওদেরকেই অন্য রাজ্যে চলে যেতে হয় কি না দেখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *