শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা! বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে

ডাক্তার রঘুপতী সারেংগী, কোচবিহার, ২৭ আগস্ট:
শেষ পর্যন্ত জরাসন্ধকে হারিয়ে পঞ্চ-পাণ্ডব স্থির করলেন জ্যেষ্ঠ-ভ্রাতা যুধিষ্ঠিরকে মহারাজা করতে তারা রাজসূয় যজ্ঞ করবেন। যতোই বৈরী সম্পর্ক থাকুক,
কৌরব-ভাইদেরও আমন্ত্রণ জানানো হলো। সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এতবড় মাপের কর্ম-কান্ড করাও সম্ভব নয়। পার্শ্ববর্তী রাজা ও সেই এলাকার সব ব্রাহ্মণ, ছোট-বড়ো সব জমিদার সহ আপামর প্রজা, সবাই সাদরে নিমন্ত্রিত হলেন।

এবার কর্ম-বন্টনের পালা।
দুঃশাসনের ওপর ভার পড়ল অতিথিবর্গের জন্য সুস্বাদু খাদ্য তৈরি এবং পরিবেশন করার। অশ্বত্থমা’কে বলা হল দূর-দূরান্ত থেকে আগত সব ব্রাহ্মণ এবং অতিথিদের স্বাগত করে এনে বসানোর। বিদুরের ওপর দায়িত্ব পড়ল সমস্ত অর্থের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখার। পিতামহ ভীষ্ম এবং দ্রোনাচার্য যৌথভাবে পুরো কর্ম-কাণ্ডের দেখভাল করবেন।

যজ্ঞস্থলে ব্রাহ্মণরা একে-একে আসতে শুরু করতেই অশ্বত্থমা তাঁদের স্বাগত জানাতে দৌড়লেন। ভীষ্ম এবং দ্রোনাচার্য্য পড়লেন ফাঁপরে! সবই তো ঠিক করা হয়েছে কিন্তু এঁদের পা-ধুয়ে দেওয়ার জন্য যে কাউকেই বলা হয়নি!
মহাভারত লিখছেন:
“চরণাস্খালনে কৃষ্ণ:
ব্রাহ্মণানাং স্বয়ং অভুৎ।”
কৃষ্ণ দু’জনের মনের কথা বুঝতে পেরে সবার মাঝেই বলে বসলেন–”এই কাজটুকুর জন্য তো আমি আছি। চিন্তা কিসের?” তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে কাজটি করলেনও।

যজ্ঞের সূচনার মুহূর্তে পূজ্য এবং গুরুজনদের শ্রদ্ধাসহ পাদ্য-অর্ঘ্য দেওয়ার রীতি সেকালে কঠোরভাবে প্রচলিত ছিল। প্রশ্ন উঠলো, কাকে দিয়ে শুরু করা হবে এই অনুষ্ঠান। পিতামহ সব বিচার করে বললেন, ” উপস্থিত সম্মানীয় সবাই কেউ গ্রহ কেউ নক্ষত্র কিন্তু কৃষ্ণ স্বয়ং জ্যোতিষ্ক– তাই প্রথম অর্ঘ্য ওঁনারই প্রাপ্য। তাইই করা হয়েছিল।

*Commentary:*
দেখ, আজ আমরা কাউকে গুরুজন জেনেও, প্রকাশ্যে প্রনাম করতে ইতস্ততঃ করি, লজ্জা পাই। অথচ মনের গভীরে সঞ্চিত অহংকারকে ধুয়ে-মুছে দিতে ভূমিষ্ঠ প্রণামের জুড়ি মেলা ভার।
কোনো কাজের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ১০ বার ভাবি, এটা করা আমার সাজে কি না। আমার সামাজিক পরিচয়ের সাথে এটা মানানসই তো? এই কাজটি ছোট, ওটাই আমার জন্য দেওয়া উচিত ছিল ইত্যাদি।
আর, শ্রী কৃষ্ণভগবানকে লক্ষ্য করুন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *