আমাদের ভারত, ১৯ আগস্ট: বিজেপি লাগাতার আন্দোলন চালাবে আর জি কর কান্ডের প্রতিবাদে। ধর্না কর্মসূচি চলবে সাত দিন। ২২ আগস্ট হবে স্বাস্থ্য ভবন অভিযান। সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, আমরা আন্দোলন করে তৃণমূল সরকারকে নাড়িয়ে দেব। একই সঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪-১৫টি প্রশ্ন তুলে ধরেন ও তার জবাব দাবি করেন। তাঁর দাবি, এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষেরও। মুখ্যমন্ত্রী এই সব প্রশ্নের জবাব দিন।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, জানি না উনি কেন এখনো মুখ বন্ধ করে রেখেছেন? আমরা প্রশ্ন করতে চাই যে কার নির্দেশে? স্বাস্থ্য দপ্তর না কলেজ? কার তরফে নির্যাতিতার মা-বাবাকে জানানো হয়েছিল যে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে? এই অফিসিয়াল নির্দেশ কে দিয়েছিল? এটা কি স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন? নাকি কোনো সচিব দিয়েছিলেন? নাকি কলেজের অধ্যক্ষ দিয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সুকান্ত মজুমদারের ২নং প্রশ্ন ছিল, মৃতদেহ অনেকক্ষণ ধরে পড়ে ছিল। সেই মৃত দেহতে প্রায় ১৫ টির মত ক্ষতচিহ্ন ছিল। রক্ত লেগেছিল পুরো ম্যাট্রেসে তারপরেও কেন স্বাস্থ্য দপ্তর খুনের মামলা দায়ের করতে না বলে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে অভিযোগ রুজু করার কথা বলেছিল?
৩ নং প্রশ্ন: কেন নির্যাতিতার মা-বাবাকে কলেজে পৌঁছানোর পরেও তিন ঘন্টা মেয়েকে দেখতে দেওয়া হয়নি বা ডেড বডির কাছে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি? পুলিশের তরফ থেকে এই বাধা দেওয়ার কারণ কি ছিল?
৪ নং প্রশ্ন ছিল, যে হাসপাতালে এই ক্রাইমটি ঘটেছে সেই হাসপাতালে কেন পোস্টমর্টেম করানো হলো? কোন নিরপেক্ষ জায়গায় কেন পোস্টমর্টেম করানো হলো না?
৫নং প্রশ্ন: শ্মশানে যিনি দায়িত্বে থাকেন তাকে পুলিশ তাড়াহুড়ো করে নির্যাতিতার বডি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল কেন? কেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নির্যাতিতার বাবা মাকে সেই সময় বারণ করেছিল পুলিশ।
৬নং প্রশ্ন: ডক্টর সন্দীপ ঘোষ কী এমন গগনচুম্বী কাজ করেছিলেন যে তাকে আর জি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর চার ঘণ্টার মধ্যে অন্য একটি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে বহাল করতে হলো? নাকি তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি বা ঘুরিয়ে কোনো ভাবে সম্পর্কিত? তার বিরুদ্ধে পরীক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি থেকে অন্যান্য ডাক্তারদের হেনস্থা সহ একাধিক অভিযোগ সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে।
৭ নং প্রশ্ন: ১৪-১৫ আগস্টের সন্দীক্ষণে আর জি করে যে দুষ্কৃতীরা এসেছিল তারা মূলত অতীন ঘোষের এলাকা থেকে এসেছে বলে খবর। সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, কলকাতায় যারা তৃণমূলের কাউন্সিলর তারা অত্যন্ত সক্রিয়। নিজেদের ওয়ার্ডে একটা পাখি মরলে যারা খবর পান একটা ফ্ল্যাট হলেও যারা খবর পান। কিন্তু এতো লোক জড়ো হয়ে গেল সেই খবর কাউন্সিলর পেলেন না? পুলিশ যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাও খবর পেলেন না? তিনি প্রশ্ন তোলেন পুলিশকে কি নির্দেশ দেওয়া ছিল দুষ্কৃতীদের ছেড়ে দিতে, যে তোমরা যাও ভেতরে গিয়ে যা পারো করো। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “সেদিন যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল, আমরা বাঙালি হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য, সেদিনকে আরো বেশ কিছু রেপ বা মার্ডার দেখতে হয়নি। পুলিশ মহিলাদের বাথরুমে গিয়ে লুকোতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে।”
৮নং প্রশ্ন: সেমিনার হল সহ সামনের ঘর কার অনুপ্রেরণায় ভাঙ্গা শুরু হয়ে গেল? কার নির্দেশ ছিল? নাকি স্বাস্থ্য ভবনের এসপিডির নির্দেশ ছিল?
৯নং প্রশ্ন: পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে দেখতে পাচ্ছি একটি সাদা রংয়ের তরল পাওয়া গেছে নির্যাতিতা শরীরে। এই পদার্থের কি ডিএনএ টেস্ট হয়েছে? কেন তা করানো হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কাছে জানতে চাই।
১০নং প্রশ্ন: হাসপাতালের মধ্যে অন ডিউটি থাকাকালীন ডাক্তারের বডি এত দেরিতে কিভাবে পাওয়া গেল? যখন তিনি ডিউটিতে ছিলেন তখন দীর্ঘক্ষণ কেন তার কোনো খোঁজ কেউ নেয়নি?
১১ নং প্রশ্ন: কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপবাবুকে সিবিআই এখনো জেরা করছেন তিনি এখনো অ্যারেস্ট হননি। কিন্তু যে কদিন রাজ্য সরকারের অধীনে এই মামলা ছিল ততদিন পুলিশ কেন তাকে সমন করল না? অথচ ফেসবুকে কেউ কিছু লিখলে তাদের কাছে সমন চলে যাচ্ছে। বিজেপির প্রাক্তন সাংসদের কাছে সমন চলে যাচ্ছে। তৃণমূলের সাংসদের কাছে সমন চলে যাচ্ছে। কুনাল সরকার সহ বিশিষ্ট জনের কাছে সমন চলে যাচ্ছে অথচ এই অধ্যক্ষ ডাক্তার বাবুকে কোনভাবে সমন করলেন না। কেন? ডাক্তারবাবু সঙ্গে কি কারোর কোনো ধরনের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে? তার তদন্ত হওয়া দরকার।
১২ নং প্রশ্ন: হাসপাতালে যে রেনোভেশনের কাজ শুরু হয়েছিল তার কি কোন টেন্ডার হয়েছিল? নাকি বিনা ট্যান্ডারে কাজ শুরু হয়েছিল?
১৩ নং প্রশ্ন: মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় কিভাবে এত ক্ষমতাশালী হয়ে গেল, যে সে ব্যারাকে গিয়ে থাকে? তার মাথার উপরে কি সিনহাবাবুর হাত ছিল? আর সিনহাবাবুর মাথার উপর তো মুখ্যমন্ত্রী হাতে রয়েছে সবাই জানে।
১৪ নং প্রশ্ন: মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনার হাসপাতালে এতগুলো লোক ঢুকে গেল কেউ কিছু করতে পারল না, কিন্তু ১৮ তারিখে যখন মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা শান্তিপূর্ণ জমায়েত করল তখন তাদের পুলিশ লাঠিচার্জ করল। ডার্বি বাতিল করা হয়েছিল, কারণ পর্যাপ্ত ফোর্স পাঠানো সম্ভব নয় বলে। অথচ যখন জমায়েত হলো তখন একটি ডুরান্ড কাপে যে পরিমাণ ফোর্স পাঠানো হয় তার কয়েক গুণ বেশি ফোর্স এলো। মানুষ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে সেই জন্যই কি ডুরান্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ বাতিল করা হয়েছিল?
শেষে সুকান্ত মজুমদার বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের যদি ন্যূনতম নৈতিকতা থাকে তাহলে দলের মুখপাত্রদের বলবো ১৪টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দিতে। বিজেপি এবং সাধারণ মানুষকে উত্তর দিন। এর উত্তর না দিতে পারলে চেয়ার থেকে টেনে নামাবো কেউ আটকাতে পারবে না।