না শোধরালে জাতি হিসাবে বাঙালি হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, আশঙ্কা তথাগতর

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, কলকাতা, ১৯ জানুয়ারি: “উত্তরণ না ঘটাতে পারলে জাতি হিসাবে বাঙালি হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” শুক্রবার এক্স হ্যাণ্ডেলে এই মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়।

তিনি লিখেছেন, “কিছু (নামে মাত্র) হিন্দু বাঙালির বিশ্বাস, মুসলমানরা কোনো গর্হিত অন্যায় করলেও তা বলা যাবে না। বললেই আপনি ‘সাম্প্রদায়িক’ আর না বললে ‘মানবতাবাদী’ ! এরই ফলে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যে সোয়া কোটি হিন্দু বিতাড়িত এবং নিহত হয়েছে তা বলা যাবে না, বা তাদের মেয়েরা ধর্ষিতা হয়েছে সেই বিষয়ে সবাইকে বোবা–কালা থাকতে হবে।

আমার নিজেরই আশ্চর্য লাগে যে বাঙালি হিন্দুর এরকম বিচিত্র ও বিকৃত নীতিবোধ কী করে হল? এর উত্তর হল, গান্ধী-নেহরুবাদ, মার্ক্সবাদ, আর সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের ল্যা-ল্যা লোভপ্রসূত রাজনীতির যুগপৎ আক্রমণে। এর থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে জাতি হিসাবে বাঙালি হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”

প্রতিক্রিয়ায় রণদ্রীপ্ত শীল লিখেছেন, “ঠিক বলেছেন, স্যার। এই বিকৃত মানসিকতা কীভাবে হিন্দু বাঙালিকে একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে, তা খুব সুন্দর ভাবে আপনি আপনার যুগান্তকারী বই ‘যা ছিল আমার দেশ’-এ তুলে ধরেছেন। তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা নেই।”

দেবযানি ভট্টাচার্য লিখেছেন, “এর পিছনে খুব সচেতন ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন ছিল। লেটার বৃটিশ পিরিয়ড ও পোস্ট বৃটিশ পিরিয়ডের একখানি বিরাট প্রজেক্ট ছিল এই প্রকার আত্মঘৃণাসম্পন্ন ‘নামে হিন্দু’ জাতি তৈরি করা। দ্য প্রজেক্ট অব ইকোসিস্টেম বিল্ডিং।”

এর আগে তথাগতবাবু এক্স হ্যাণ্ডেলে বাঙালি হিন্দুর এই পরিণতি নিয়ে একাধিকবার লিখেছেন। তিনি লিখেছে, “অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, যেখানে বাঙালি হিন্দুরা বাঙালি মুসলমানের হাতে এরকম নির্যাতিত হয়েছে সেখানে তাদের এক বড় অংশ মুসলমানের হয়ে ওকালতি করে কীকরে?
এর একাধিক কারণ আছে। এক প্রয়াত, প্রবলভাবে হিন্দুত্ববিরোধী ঐতিহাসিকের কাছে আমি প্রশ্নটা রেখেছিলাম। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, কে মনে রাখতে চায় যে তার মাকে তার চোখের সামনে মুসলমানরা ধর্ষণ করছে এবং সে কিছুই করতে পারছে না? তাই তারা দৃশ্যটাকে হয় স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে, নাহলে এই কুকীর্তির সপক্ষে একটা যুক্তি খাড়া করে, যেমন “আমরা তাদের দাওয়ায় উঠতে দেই নাই, নীচে দাড়া করাইয়া কথা কইতাম!”

আর এক কারণ, পূর্ববাংলার উদ্বাস্তুদের প্রতি ভারত সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ। ১৯৫০-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে যখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় পূর্ব পাকিস্তানে বীভৎস হিন্দুনির্যাতন হচ্ছে তখন পন্ডিত নেহেরু লিয়াকত আলির সঙ্গে এক অবিশ্বাস্য রকম নির্বোধ চুক্তি করে বসে রইলেন এবং বললেন, এদের পুনর্বাসনের দরকার নেই, এরা পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাবে এবং সেখানকার সরকার তাদের রক্ষা করবে।

এই নির্বুদ্ধিতার সুযোগ নিয়েছিল কম্যুনিস্টরা — তারা কুমন্ত্রণা দিয়ে উদ্বাস্তুদের বুঝিয়েছিল, এটা হিন্দু-মুসলমানের লড়াই নয়, শোষক ও শোষিতের লড়াই। এরা উদ্বাস্তুদের আন্দামানে পুনর্বাসিত হতেও বাধা দিয়েছিল।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *