ছবি: নিহত বিজেপি কর্মী সৈকত ভাওয়াল।
আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ১৩ ডিসেম্বর: উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে বিজেপি কর্মী সৈকত ভাওয়ালকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ দুষ্কৃতীকে। তাদের নাম সুদীপ্ত ঘোষ ওরফে রাইডার বাবাই, সোমনাথ গাঙ্গুলি ওরফে কোলে এবং সুমন সাহা ওরফে লাছার। ধৃতরা প্রত্যেকেই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতী বলে বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় পরিচিত। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বীজপুর থানার পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় বিজেপির দলীয় কর্মসূচি গৃহসম্পর্ক অভিযানে বেরিয়ে দুষ্কৃতী হামলায় প্রকাশ্যে খুন হন বিজেপি কর্মী সৈকত ভাওয়াল (৩২)। হালিশহর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বারেন্দ্র গলিতে তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়। গৃহ সম্পর্ক অভিযানে বিজেপি কর্মীদের উপর হালিশহরে হামলার ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও ৬ বিজেপি কর্মী। তাদের কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ছবি: ধৃত দুষ্কৃতি।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হালিশহর এলাকা। বিজেপির অভিযোগ, সৈকত ভাওয়াল খুন সহ বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় অন্তত ২০/২৫ জন শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জড়িত। পুলিশ মাত্র ৩ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩০৭, ৩২৫ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এদিকে এই খুনের ঘটনায় বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবিতে রবিবার সকাল থেকে বীজপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। এই থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বীজপুরের বিজেপি বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়, ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি উমা শঙ্কর সিং, বিজেপি নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র, নোয়াপাড়ার বিজেপি বিধায়ক সুনীল সিং সহ অন্যান্যরা।
ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি উমা শঙ্কর সিং তৃণমূলকে ও পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সৈকত ভাওয়াল খুনের ঘটনাই শেষ রক্ত ঝরল আমাদের। এরপর আমাদের দলের কোনও কর্মীর রক্ত ঝরলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে। তখন দুই পক্ষের রক্ত ঝরবে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট তখন সামলাতে পারবে না। দলের কর্মীদের আমি বার্তা দিতে বাধ্য হচ্ছি, এরপর আমাদের একজন কর্মী আক্রান্ত হলে, তৃণমূলের কর্মীরাও আক্রান্ত হবে।”
স্থানীয় বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বলেন, “আমি সিপিএম আমলেও রাজনীতি করেছি। কিন্তু এরকম জঙ্গলের রাজত্ব দেখিনি। এখন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করলে একটা খুনের পর দ্বিতীয় কোনও খুন হয় না। কিন্তু পুলিশ দুষ্কৃতীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং বিজেপি কর্মীদের মারতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। আমাদের দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতির কনভয়ে হামলা হল, যা অবস্থা তাতে পশ্চিমবঙ্গে এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন দরকার। আমি বিধায়ক হিসেবে নিহত সৈকতের পরিবারের পাশে আছি। বড় দাদার মত আজীবন ওর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকব।”
দলগতভাবে বিজেপিও নিহত কর্মীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। সাংসদ অর্জুন সিং সৈকত ভাওয়াল খুনের পর রাতেই কল্যাণী জে এন এম হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, “তৃণমূল সব সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পাল্টা দেওয়ার সময় এসেছে। ফলে এরপর প্রতিরোধ বলুন, প্রতিবাদ বলুন, প্রতিকার বলুন সব সুদে আসলে ফেরত দেব আমরা। এভাবে আর কত কর্মীর বলিদান সহ্য করব? পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবেই।”
এদিকে এই খুনের ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবোধ অধিকারী বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। পুরনো ব্যাক্তিগত শত্রুতার কারণে এই মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। যে যুবক মারা গেছে, তার পরিবারের পাশে আমরা থাকব। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। পুলিশকে বলব, দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুক। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে এই ঘটনার। দোষীরা নিশ্চই সবাই ধরা পড়বে।” গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বীজপুর থানার পুলিশ।