জীবন সংগ্রামের নজির, “নির্যাতিতাদের পাশে থেকে লড়াই করতে চাই, “শ্বশুরবাড়ি ফিরব না”, স্পষ্ট জবাব রেনুর

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৩ জুন: শ্বশুরবাড়িতে না। নির্যাতিতাদের পাশে থেকে নতুন করে জীবন সংগ্রাম শুরু করতে চাই। হাসপাতাল থেকে ছুটি, দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের নতুন করে পথচলার কথা জানাল কেতুগ্রামের নির্যাতিতা গৃহবধূ রেনু খাতুন। আপাতত সুস্থ হয়ে আর শ্বশুরবাড়ি নয়, ফিরছেন বর্ধমানে দিদির বাড়িতে। 

উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাসিন্দা রেণু খাতুনের সঙ্গে প্রায় ৪ বছর আগে প্রেমের করে কেতুগ্রামের কোজলসার বাসিন্দা শের মহম্মদের বিয়ে হয়। রেণু মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় বিয়ের পরে নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের কাজে নিযুক্ত হয়। তারপরেই প্রায় একমাস হয়েছে রেণুদেবী সরকারি ভাবে নার্সের চাকরির জন্য প্যানেলে নথিভুক্ত হয়। সরকারি চাকরি করলে রেণুদেবী তাঁর স্বামী’কে ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গে চলে যাবে এমনই আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে যায় তাঁর স্বামী। অভিযোগ, সেই আতঙ্কে স্বামী ও তার দুই বন্ধু মিলে রেণুদেবী’র ডান হাত কব্জি থেকে কেটে দেয়। এর পরেই রেণুদেবীর বাপের বাড়ি’র লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা যদিও তাঁর কাটা হাত আর জুড়তে পারেননি। ডান হাত চলে যাওয়ার শোক কাটিয়ে রেণুদেবী খাতা কলম নিয়ে লেখা শুরু করে। তার ইচ্ছা শক্তি তাঁকে নতুন করে পথ দেখায়। একটুও ভেঙে পড়েননি তিনি। নিজে বাঁ হাত দিয়ে ফের লেখা শুরু করেছে।

তিনি ইংরেজিতে নিজের নাম ঠিকানা লিখছেন। পাশাপাশি ওয়ান, টু লিখছেন। উর্দু ভাষাতেই লেখা অভ্যাস শুরু করেন। ফুলও আঁকছেন সাদা কাগজে। এদিকে ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যজুড়ে। রেনুর পাশে দাঁড়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতরে চাকরিরও ব্যবস্থা হয়। অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সোমবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পায় কেতুগ্রামের গৃহবধূ রেনু খাতুন।

একদিকে চিকিৎসায় রেনু যেমন নিজেও খুশি। তেমনই খুশি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সহ স্বাস্থ্য দপ্তর এবং এই বেসরকারি হাসপাতালের প্রশংসা করে রেনু বলেন, “নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডেই অপারেশন হয়েছে, চিকিৎসা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকদের পরামর্শ মত তিনমাস পর কৃত্রিম হাত লাগাতে চাই। এখন আপাতত ফিজিওথেরাপি করতে বলেছেন।” তবে শ্বশুরবাড়ি আর ফেরার প্রশ্ন নেই বলে রেনু স্পষ্ট বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে ফিরব না। আপাতত বর্ধমানে দিদির বাড়িতে এখন ফিরছি। তবে আগামীদিনে এরকম নির্যাতিতাদের পাশে থেকে নতুন করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে কাজ যোগ দেবো।” 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *