রাজেন রায়, কলকাতা, ১০ জুন: ২৯ মে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলা বক্তব্য ১৩ দিনের মধ্যে যেন বদলে গেল ১০ জুনে। তাঁর বলা বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যার দাবি করে বিষয়টি পুরোপুরি সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে যেন বাঁচার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। যা শুনে রাজ্যে বিজেপির নেতারা টিপ্পনি কেটে বলছেন, ডিগবাজির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! ঠিক যেমন ভাবে এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিল দলকে দুচ্ছাই করে পাত্তা না দিয়ে আবার ঘূর্ণিঝড়ের পর আরেক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে জামাই আদর দেখিয়েছেন। কারণ আগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল করোনা চলাকালীন রাজ্যের পরিকাঠামোগত ক্রটি দেখতে এসেছিল আর পরের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘূর্ণিঝড়ের পর রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দেখতে এসেছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘আমি করোনা এক্সপ্রেস বলিনি, মানুষ করোনা এক্সপ্রেস বলেছে৷’
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বলা ‘করোনা এক্সপ্রেস’ শব্দবন্ধটিকে কার্যত লুফে নিয়ে বুধবারে ভার্চুয়াল র্যালিতে ২০২১ সালের বিধানসভায় মমতার ‘এগজিট এক্সপ্রেস’ বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপরেই তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে দাবি করে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা পরিযায়ীদের নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিক স্পেশালে ইচ্ছে করে গাদা গাদা লোক পাঠানো হচ্ছে৷ ১২০০ লোক আসার কথা যে ট্রেনে সেখানে ২৫০০ লোক পাঠাচ্ছে! একসঙ্গে গাদাগাদি করে লোক পাঠানোয় করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে৷ তাই মানুষ করোনা একে এক্সপ্রেস বলেছেন৷’ নরেন্দ্র মোদী সরকারকে লকডাউন গভর্মেন্ট বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীদের দুই শিফটে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রথম বেসরকারি অফিসের মত রাজ্য সরকারি অফিসেও ২টি শিফট চালু করার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্য সরকারি অফিসে চালু হচ্ছে দু’টি শিফট। প্রথম শিফট সকাল সাড়ে ন’টা থেকে শুরু হয়ে চলবে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত। আরেক দফা শিফট দুপুর সাড়ে ১২ টায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত। এর ফলে যেমন অফিসে ভিড় এড়ানোর পাশাপাশি পরিবহণের সমস্যাও বেশ কিছুটা এড়ানো যাবে। বেসরকারি অফিসগুলির ক্ষেত্রে সম্ভব হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার পরামর্শ দেন তিনি। একান্ত দরকার হলে তবেই অফিসে আসতে অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে, ঊর্ধ্বগামী সংক্রমণের কারণে জুলাই মাস থেকেও ফের স্কুলে পঠনপাঠন হয়তো শুরু হবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষাগুলো সেরে ফেলা হবে বলেই জানান তিনি। উল্লেখ্য, মাধ্যমিকের মিউজিকের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা বাকি রয়েছে যা ২০ জুন নেওয়ার কথা। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের বেশ কিছু বাকি পরীক্ষা ২, ৬, ৮ জুলাই নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি স্কুলগুলির উদ্দেশে বেতন না বাড়ানোর জন্যও অনুরোধ করেন।