Deucha, Pachami, দেউচা-পাঁচামি যাওয়ার পথে মানবাধিকার সংগঠনকে বাধা ও হেনস্থা

আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ৫ মার্চ: দেউচা-পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লাখনি এলাকায় বাধা দেওয়া হলো মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর প্রতিনিধি দলকে। শুধু তাই নয়, পুলিশের সামনেই আদিবাসীদের একাংশ তাদের হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল। দীর্ঘক্ষণ মাঠের মধ্যে হেনস্থা করার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক প্রতিনিধি। এরপরেই প্রতিনিধি দলকে সিউড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়। অসুস্থ রানু ঘোষকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, দেউচা-পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লাখনি এলাকার মানুষের অভাব অভিযোগ শুনতে বীরভূমে আসেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য, রাংতা মুন্সি, জয়গোপাল দে, শুভাশিষ ঘোষ, শঙ্কর ঘোষ, রাণু ঘোষ, পার্থ মুখোপাধ্যায় এবং গৌরাঙ্গ মণ্ডল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দল সিউড়ি বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটি গেস্ট হাউসে ওঠেন। খবর পেয়ে ভোর থেকে সেই গেস্ট হাউস ঘিরে ফেলে পুলিশ। মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের গেস্ট হাউস থেকে বের হতে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। ঘণ্টা দেড়েক বাকবিতণ্ডার পর সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ পুলিশ তাদের গ্রামে যাওয়ার অনুমতি দেয়। শর্ত দেওয়া হয় তাদের গাড়ির সঙ্গে থাকবে পুলিশের গাড়ি। সেই শর্ত মেনেই প্রতিনিধি দল দেউচা, পাঁচামির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার পথে শেওড়াকুঁড়ি মোড়ের কাছে আদিবাসীদের একাংশ তিরধনুক নিয়ে তাদের গাড়ি আটকায়।

প্রতিনিধি দলের সদস্য রাংতা মুন্সী বলেন, “তিলপাড়া ব্যারেজ পেরিয়ে শেওড়াকুঁড়ি মোড়ে ১০০-১৫০ মানুষ আমাদের গাড়ি আটকায়। তারা আমাদের একটা ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। ফোন ছিনিয়ে নেয়। সাথে চলতে থাকে অকথ্য গালিগালাজ। প্রায় ২ ঘণ্টা এভাবে আটকে থাকার পর আমাদের সদস্য রাণু ঘোষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমিও হতে থাকে। তখন বেগতিক দেখে আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রাণুকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়া পুলিশের সামনেই ঘটেছে”।

মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, যারা মাঠের মধ্যে তাদের আটকে রেখেছিল তারা তৃণমূলী গুণ্ডা ও তৃণমূলের প্রসাদ পাওয়া আদিবাসীরা ছিল। রাংতা মুন্সি বলেন, “আমরা কোন রাজ্যে বসবাস করছি? রাজ্যের যে কোনও জায়গায় একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুসন্ধানে যাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। কিসের ভয়ে সরকার গুণ্ডা লেলিয়ে সেই অধিকার খর্ব করতে চাইছে? সরকারের এই ধরনের ফ্যাসিস্ট আচরণ ছত্তিশগড়ে প্রত্যক্ষ করা যায়। অথচ আজ বাংলাতেও সেই একই ঘটনা ঘটছে। আসলে এটা স্পষ্ট যে, হাজার হাজার বছর ধরে বাস করা জনজাতির মানুষকে তাদের আদিভূমি থেকে উচ্ছেদ করে কর্পোরেটের হাতে খনিজ সমৃদ্ধ এলাকাকে তুলে দেওয়ার একই ছক আজ ছত্তিশগড়, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো এই রাজ্যের দেউচা, পাঁচামিতেও চলছে। উন্নয়নের নামে আদিবাসী মানুষের অধিকারকে দুরমুশ করে সরকারের এই কর্পোরেটের দালালির নীতি আমরা সারা দেশের মতো এখানেও প্রত্যক্ষ করছি। আর তাই দেউচার আদিবাসী মানুষের কথা যাতে কোনও মতেই বাইরে না আসে তার জন্যই শাসকের এই আপ্রাণ চেষ্টা। আমরা ধিক্কার জানাই তৃণমূলের এই গুণ্ডারাজকে। আমরা ধিক্কার জানাই নাগরিকের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করার এই তৃণমূলী চক্রান্তকে। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব”।

এদিন কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগে প্রতিনিধি দল জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *