আমাদের ভারত, ১৭ এপ্রিল: “হাওড়ার পরিস্থিতি খুব স্পর্শকাতর। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। মেলামেশা রাস্তায় বেরোনো সব বন্ধ করে দিন। দরকার হলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ খাবার দেবে। নাহলে আটকাতে পারব না হাওড়াকে।” হাওড়ায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে এভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নবান্ন থেকে রাজ্যের জেলাগুলির প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এখন সংক্রমণ পারিবারিক হতে হতে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ তিনি গোষ্ঠী সংক্রমনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই গোষ্ঠী সংক্রমনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনকে সতর্ক করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের উদ্দেশ্যে তার বার্তা, প্রয়োজন পরলে বাজারে সশস্ত্র পুলিশ নামানো হোক। কোনভাবেই যেন বাজারে এক জায়গায় পাঁচ জনের বেশি না দাঁড়াতে পারে।
দেশের যে ১৭০ টি জেলাকে হটস্পট বলে চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে হাওড়া সহ বাংলার চারটি জেলা আছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,” হাওড়া এখন রেড স্টার জোন হয়ে গেছে অর্থাৎ পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। আমি দেখতে চাই হাওড়া রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে ১৪ দিনের মধ্যে চলে এসেছে। আর যেন কেউ সেখানে নতুন করে আক্রান্ত না হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন প্রত্যেকে মাস্ক পরছেন কিনা তাও দেখতে হবে। নিয়মভঙ্গ কারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওড়ার প্রতিটি বাজার পুলিশ স্যানিটাইজ করবে বলেও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন মেদনীপুর, আসানসোল রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে চলে এসেছে। উত্তর ২৪ পরগনাকেও অরেঞ্জ জোনে আনতে হবে। তবে তার জন্য কড়া নজরদারি প্রয়োজন বলে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন তিনি। একই সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরলে তাদেরকে হোম কোয়ারিন্টিনে পাঠানোর নির্দেশিকা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বিরোধীরাপাল্টা সাওয়াল করেছেন। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার পরে টনক নড়লো মুখ্যমন্ত্রীর। সেটাই আশ্চর্যের। কি চাপা দিতে চাইছিলেন তিনি? হাওড়া সহ রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় যে লকডাউন ঠিকমতো মানা হচ্ছেনা তা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। মহাকরণ থেকে নিজের সচিবালয় হাওড়াতে নিয়ে গিয়েও কেন সেটা বুঝতে পারল না রাজ্য সরকার?”
এদিকে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও হাওড়ার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ছিলেন হাওড়া জেলা শাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, পুলিশ কমিশনার এবং বিভাগীয় প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। হাওড়া জেলায় করোনা আটকাতে কলকাতার মডেলকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই বৈঠকে করোনা হটস্পট গুলিতে কড়া নজরদারি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে স্থির হয়েছে রাস্তায় লোকজনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বস্তি এলাকাগুলিতে সিভিক ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হবে।