আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ১৬ নভেম্বর: পরকীয়ায় জড়িত স্ত্রী। বদলা নিতে খুব কাছ থেকে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্ত্রীকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামীর। তবে পুলিশ গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। তাকে রবিবার রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের নলহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বিদু পাড়ায়। গুলিবিদ্ধ গৃহবধূর নাম সীমা খান। পেশায় বিউটি পার্লারের মালিক। শনিবার রাতে পার্লার বন্ধ করে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির দরজার সামনে তাকে পিছন থেকে চারটি গুলি করা হয়। দুটি গুলি লাগে বুকে। দুটি হাতে এবং কোমরে। থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই ঘটনার খবর পেয়ে পৌঁছে যায় পুলিশ। গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে নলহাটি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পরে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জখম গৃহবধূ জানান, তাঁর স্বামীই তাকে গুলি করেছে। বাড়ির সামনে একটি জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গল থেকে মুখে কাপড় বেঁধে বেড়িয়ে এসে গুলি চালিয়েছে। মুখ দেখা না গেলেও শরীর দেখে তিনি স্বামীকে চিনতে পেরেছেন বলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্বামী রজু খানকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গিয়েছে, রজু খানের সঙ্গে সীমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পরকীয়ার কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে রজুর সঙ্গে। সীমা নলহাটিতে একটি বিউটি পার্লার চালায়। স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় সীমা নিজে জায়গা কিনে বাড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করে। তারপরেও স্বামী অত্যাচার করায় পুলিশে অভিযোগ জানায় সীমা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কিছুদিন জেলে ছিলেন স্বামী রজু খান। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও চলছে। অভিযোগ, নলহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আয়েশা সিদ্দিকার স্বামী রমজান শেখের সঙ্গে সীমার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। সেই কারণেই রজুর সঙ্গে সীমার দূরত্ব বাড়ে।
জখম সীমার নিকট আত্মীয় মনিরা খাতুন বলেন, “সীমা শ্বশুর বাড়িতে থাকে না। একই ওয়ার্ডের কয়ালপাড়ায় শ্বশুরবাড়ি। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ সীমা আমাকে ফোন করে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা বলে। সে জানায় তার স্বামীই তাকে গুলি করেছে। কারণ এর আগে একটি অভিযোগে দেড়মাস জেলে ছিল তার স্বামী রজু খান। তাছাড়া এখন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। বেশ কয়েকবার মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় নিজে পশ্চিম বিদু পাড়ায় বাড়ি করে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকত।”
ঘটনার পরেই পুলিশ রাতেই রজু খানকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার কর। যদিও রবিবার আদালতে দাঁড়িয়ে রজু সাংবাদিকদের বলেন, “কাউন্সিলরের স্বামী রমজান শেখের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সেই নিয়ে বিবাদ। তবে আমি গুলি চালাইনি। আমি কিছু জানি না”। একই দাবি রজুর মা নুরেমা বিবির। তিনি বলেন, “আমার ছেলে অসুস্থ। হার্টের অপারেশন হয়েছে। বাড়িতেই শুয়ে ছিল। রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। বউমার সঙ্গে রমজান শেখের সম্পর্ক ছিল। তার আরও একজনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছিল। তাই রমজান গুলি চালিয়েছে। রমজানকে ধরলে সব সত্য বেড়িয়ে আসবে। কিন্তু পুলিশ আসল লোককে ধরে না। ওরা তৃণমূল করে বলেই পুলিশ ধরে না। অহেতুক আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে”।
যদিও তৃণমূলের নলহাটি ১ নম্বর ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “রমজান ভাল ছেলে বলে জানি। ররমজান গুলি চালিয়েছে বিশ্বাস হয় না।”
পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রজু খানকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে।

