TMC, Nandigram, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই উত্তপ্ত নন্দীগ্রাম, ধারালো অস্ত্রের কোপে প্রাণ গেল এক তৃণমূল কর্মীর, জখম এক

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ৯ ডিসেম্বর: মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তার মাত্র একদিন আগেই রবিবার গভীর রাতে নন্দীগ্রামের কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করলো দুষ্কৃতীরা। সেই সঙ্গে তৃণমূলের এক বুথ সভাপতিও গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে এই নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকেই লড়াই করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর জেলা সফরের একদিন আগেই সেই নন্দীগ্রামেই তৃণমূল কর্মীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। এই ঘটনার প্রতিবাদে
নন্দীগ্রামজুড়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বনধ ডেকেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দোষীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এই বনধ চলবে বলেই দাবি তৃণমূল নেতাদের।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার রাতের দিকে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭নং জালপাই এলাকায় তৃণমূল নেতা কর্মীদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। স্থানীয় বুথ সভাপতি গুরুপদ মন্ডল ও তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মন্ডলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্যাপক কোপানো হয়। এর জেরে ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন দু’জন। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা বেরিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর গুরুতর জখম অবস্থায় বিষ্ণুপদকে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত দেড়টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে গুরুতর জখম গুরুপদ মণ্ডল বর্তমানে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে রবিবার তমলুক এগ্রিকালচার সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রাম ১নং ব্লকের কাঞ্চননগর গ্রাম। সেখানে বুথ দখলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছিল। পুলিশের সামনেই রীতিমতো বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা। অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে গায়ের জোরে বুথ দখলের। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধেও বোমাবাজির অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। বোমার ঘায়ে অল্পবিস্তর জখম হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমের দুই কর্মীও। ব্যাপক বোমাবাজির পর এই নির্বাচনে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ৭টি আসনেই জয়লাভ করেছিল বিজেপি। আর তার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই তৃণমূলের দুই নেতা কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের চেষ্টা ঘিরে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্রমেই সুর চড়াচ্ছে তৃণমূল।

নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বাপ্পাদিত্য করের দাবি, “বিজেপির দুষ্কৃতীরাই এই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে”। বাপ্পাদিত্য কর জানান, “রবিবার তমলুক এগ্রিকালচার সোসাইটির নির্বাচন ছিল। সেই নির্বাচনে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাস চালিয়েছিল বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী ও মেঘনাদ পাল। ব্যাপক বোমাবাজি করে এই নির্বাচনে সবকটি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। সেই ভোটে জেতার পরেই খেজুরি সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে দুষ্কৃতীদের এনে নন্দীগ্রামে ব্যাপক সন্ত্রাস চালাতে শুরু করেছে বিজেপি। রবিবার রাতে সেই দুষ্কৃতীরা একযোগে তৃণমূলের দুই নেতা কর্মীর ওপর প্রাণঘাতি হামলা চালিয়েছিল” বলে দাবি করেন বাপ্পাদিত্য কর। তিনি জানান, “এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য নন্দীগ্রামে বনধ পালনের ডাক দিয়েছে তৃণমূল।”

যদিও এই হামলার দায় পুরোপুরি অস্বীকার করেছে নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতারা।

বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পালের দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পূর্ণ পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই হামলা বলে আমরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি।” মেঘনাদ পালের দাবি, “দু’জনেই মদ্যপ ছিলেন বলে শুনেছি। ওরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে এই কান্ড ঘটিয়েছে। তবে এই ঘটনায় যে বা যারা জড়িত তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *