West Bengal, Tripura, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে নাকি বাংলায়? নিয়োগ দুর্নীতিতে ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছিল, পরের বছর ক্ষমতা হারিয়েছিল ত্রিপুরার মাণিক সরকার

আমাদের ভারত, ৩ এপ্রিল: ২০১৭ সালে ত্রিপুরার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা হাইকোর্টে। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছিল ও সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়েছিল। ফলে চাকরি চলে গিয়েছিল ১০ হাজার শিক্ষকের। পরের বছর ত্রিপুরায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল দীর্ঘ শাসন করা বাম সরকার। ঘটনা চক্রে পশ্চিমবঙ্গেও এই মুহূর্তে কিছুটা তেমন পরিস্থিতি। ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা চাকরি হারা হলেন। আর এদিকে ২৬- এ বিধান সভা নির্বাচন? তাহলে কি চাপে পড়লেন তৃণমূল সুপ্রিমো? সেই জন্যই কি তড়িঘড়ি ব্রাত্য বসুকে ডেকে পাঠালেন, করলেন উচ্চ স্তরের বৈঠক?এখানেও কি ত্রিপুরা সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের সর্বেসর্বা?

২০১০ এবং ১৩ সালে দুই দফায় স্কুল শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক পদে ১০, ৩২৩ জনকে নিয়োগ করেছিল ত্রিপুরার তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নিয়োগ নিয়ে মামলা হয় ত্রিপুরা হাইকোর্টে। গোটা প্যানেল বাতিল করেছিল আগরতলার উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল মানিকের সরকার। ২০১৭ সালের শীর্ষ আদালত সমগ্র প্যানেল বাতিলের নির্দেশই বহাল রাখে। এদিকে তার পরের বছরই ছিল ত্রিপুরা বিধানসভার ভোট। যে ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল বামেদের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

এদিকে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বাংলায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল এক বছর পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ সেই রায় বহাল রেখেছে। ঘটনাচক্রে আগামী বছর বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। এখানেও কি ত্রিপুরার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে?

তবে এই প্রসঙ্গে বেশকিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা কম বেশি ৪০ লক্ষ। ফলে সেখানে ১০ হাজার ৩২৩ সংখ্যাটি সারা রাজ্যে অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু বাংলার জনসংখ্যা ১০ কোটির বেশি। সেখানে ২৬ হাজার সংখ্যাটা সারা বাংলায় কতটা এবং কী প্রভাব ফেলবে তাও ভাবার।

বিজেপির একাধিক নেতার দাবি ত্রিপুরার বাম সরকারের পতনে ১০ হাজার ৩২৩ জনের চাকরি বাতিল যেমন প্রভাব ফেলেছিল বাংলাতেও সেই একই ঘটনা ঘটবে। কারণ বাংলা ও ত্রিপুরার মাটি আলাদা হলেও মৌলিক একটা মিল রয়েছে দুই রাজ্যে। দীর্ঘ বাম শাসকের পর মানুষ পরিবর্তন করেছিলেন, কিন্তু তৃণমূল যেভাবে দুর্নীতি করেছে তাতে মানুষের ক্ষোভ হিমালয় সমান জায়গায় পৌঁছেছে। চাকরি বাতিল সহ আর যা যা হচ্ছে, তাতে সামনের ভোটে তাদের বিদায় নিশ্চিত।

তবে বামেরা মনে করে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কাজ করেছিল ত্রিপুরায়। বাংলাতেও তাই হবে। তৃণমূল যখন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে যাবে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মাথায় থাকবে ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। তার সাথে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরির বাতিল। যা তৃণমূলের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কারণ রায় ঘোষণার পরেই শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে তড়িঘড়ি নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি আমলাদের নিয়ে বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকার নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। সেই সঙ্গে মমতা বলেছেন, এই মামলায় তো তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে জেলে রেখে দেওয়া হয়েছে অনেক দিন হয়ে গেল। একজনের অপরাধে কতজনের শাস্তি হয়?

আর এই সব কিছু দেখে শুনে বার বার ত্রিপুরার প্রসঙ্গ রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় উঠে আসছে। কারণ বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা ভোট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *