আমাদের ভারত, ৯ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর লাগাতার নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। শিউরে ওঠার মত একের পর এক ভিডিও ফুটেজ সামনে এসেছে। সব ভিডিও ফুটেজের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব না হলেও সেগুলো দেখে এপার বাংলার মানুষের মন শিউরে উঠছে। ওপার বাংলা থেকে আসা এক হিন্দু দম্পতির অভিজ্ঞতা শুনে ভয়াবহতার অনুমান করতে গিয়ে নিজেরাই আতঙ্কে ভুগছে বাঙালি।
মাথার তিলক মুছে, সিঁদুর মুছে, মালা খুলে তাদের পরিচয় লুকোতে হচ্ছে। তারা যে হিন্দু! ওপারে কেবলমাত্র বেঁচে থাকতে বা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে এটাই সবথেকে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে চান না তারা। তারা যে হিন্দু সেটা বুঝতে দিতে চান না প্রকাশ্যে। জাত, ধর্ম লুকিয়ে কোনরকমে টিকে থাকার ভয়াবহ লড়াইয়ের কথা গায়েন দম্পতির গলায় ধরা পড়েছে।
প্রায় প্রতিদিনই পেট্রাপোল পেরিয়ে এপার বাংলায় আসছেন বাংলাদেশিরা। তাদের মুখেই এই অসহায় অবস্থার কথা জানা যাচ্ছে। একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গায়েন দম্পতি সোমবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন। কিন্তু সেখান থেকে এসে তারা যা বললেন তাতে শিউরে উঠছে এপার বাংলার মানুষ। ভয়ে ক্যামেরা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন সুভাষ গায়েন। কথা বলতে গেলে তার ভয়ে বুক কেঁপে উঠছে। চোখে মুখে ধরা পড়ছে প্রবল আতঙ্ক। দু’দিনের জন্য কোনো কাজে ভারতে এসেছেন স্ত্রীকে নিয়ে। আবার ফিরতে হবে ওপারে। ওই বৃদ্ধের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বলেন, আতঙ্ক লাগছে, মনে হয় এই যেন যুদ্ধ লেগে যাচ্ছে। ওখানে সব মুসলমান খারাপ না। কিন্তু কিছু মানুষ সুযোগের অসৎ ব্যবহার করছে। মারধর, ডাকাতি, লুটপাট, মেয়েদের সঙ্গে অন্যায় করছে। হিন্দুরা সেখানে স্বাধীন ভাবে থাকতে পারছে না। কোণঠাসা হয়ে গেছেন তারা। আওয়ামী লিগের সময় তো একরকম ব্যাপার ছিল। এখন মৌলবাদীদের রাজত্ব।
বর্তমানে বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ধরুন আমি মালা পরি। কিন্তু এখন মালা পরি না। খুলে রেখেছি। এর থেকে বেশি আর কী বলব বলুন। কারণ আমি চিহ্নিত হতে চাই না। বাইরে চলাফেরা করতে হয়, ঘরে মেয়ে বউ রয়েছে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী। গোটা বিষয়টা প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুটা ভয় ধরা কণ্ঠেই বললেন সিঁদুরের টিপ পরি আমরা। ধরুন হাতে গোনা দুটো হিন্দু। তাহলে কী সিঁদুরের টিপ পরে বেরতে পারি? রাস্তায় বের হতে ভয় লাগে। কিছু বললে আমরা আর বাঁচতে পারব না। সিঁদুর থাকলে চিহ্নিত হয়ে যাই হিন্দু। আমাদের ভয় লাগে। এর থেকে বেশি বললে ওপারে গিয়ে আমরা শেষ।
বাংলাদেশের হিন্দুদের পরিস্থিতিটা তাদের কথাতে স্পষ্ট। তাদের মতোই অন্য হিন্দু যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তদের অভিজ্ঞতাও এক। হিন্দুদের স্বাধীনতা নেই। একটাও কথা বলতে পারছেন না তারা। সব সময় ভয়ে আছেন।